ভারতে লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ-আন্দোলনের অন্যতম মুখ, পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (এনএসএ) মামলা দায়ের হয়েছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন জানিয়েছে, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনতাকে সহিংসতায় প্ররোচিত করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে।

লাদাখের পুলিশ শুক্রবার স্থানীয় সময় আড়াইটায় ওয়াংচুককে তার লেহের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। এর একদিন আগে ওয়াংচুক বলেছিলেন, এই আন্দোলনের জন্য তাকে যদি গ্রেপ্তার করা হয়, তাতেও তিনি খুশি হবেন।

ভারতীয় পত্রিকা এনডিটিভি জানায়, এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ওয়াংচুকের অলাভজনক সংগঠন ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ’ (এসইসিএমওএল)-এর বৈদেশিক অনুদান নেওয়ার লাইসেন্স বাতিল করে। ২০১০ সালের বৈদেশিক অনুদান সংক্রান্ত আইন (এফসিআরএ)-এর আওতায় এই লাইসেন্স বাতিল করা হয়। নিয়ম ভেঙে বিদেশি অনুদান নেওয়ার অভিযোগে চলতি মাসে এসইসিএমওএল-এর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।

পাহাড়ি অঞ্চলের কর্মী ওয়াংচুক ২০১৮ সালে র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার জিতেছেন। তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও লাদাখের কেন্দ্রশাসিত প্রশাসনের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

লাদাখের রাজধানী লেহ শহরে সহিংস বিক্ষোভের দুই দিন পর ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। লেহতে সহিংস বিক্ষোভে চারজন নিহত এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে নিরাপত্তাকর্মীরাও ছিলেন।

বৃহস্পতিবার ওয়াংচুক এনডিটিভি-কে বলেন, তার সংগঠন কোনো বিদেশি অনুদান নেয়নি। তবে জাতিসংঘ, সুইস ও ইতালীয় কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করেছে এবং সব কর পরিশোধ করেছে। তিনি বলেন, “তারা এটিকে বিদেশি অনুদান ভেবে ভুল করেছে। আমি একে সরকারের ভুল মনে করি। তাই কিছু মনে করছি না। এটাকে বিদেশি অনুদান মনে করা হয়েছে, কিন্তু এটি তা নয়।”

ভারতের কেন্দ্র সরকারের শাসনের বিরুদ্ধে গত তিন বছর ধরে লাদাখে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পাশ করা হয়। এর মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করা হয়। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীরকে শিগগিরই রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কিন্তু তা দেরি হওয়ায় নতুন করে অনশন শুরু করেন সোনম ওয়াংচুক। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলেও জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে; অন্যদিকে, লাদাখে কোনও বিধানসভা নেই। এ নিয়ে লাদাখের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার সময় ওয়াংচুকসহ অনেকেই এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই লেফটেন্যান্ট গভর্নরের প্রশাসনের অধীনে রাজনৈতিক শূন্যতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে শুরু করে। এই অসন্তোষের ফলে বড় ধরনের বিক্ষোভ এবং অনশন শুরু হয়।

প্রথমবারের মতো বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ লেহ এবং মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কার্গিলের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো একটি যৌথ প্ল্যাটফর্ম: লেহ অ্যাপেক্স বডি এবং কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স-এর অধীনে হাত মেলায়।

কেন্দ্র সরকারের দাবি, ওয়াংচুক অনশন না ভেঙে আন্দোলন চালিয়েছেন, অথচ অ্যাপেক্স বডি লেহ ও কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিল। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “আলোচনার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছিল। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যক্তি, যারা এই অগ্রগতিতে খুশি নন, তারা এ প্রক্রিয়া ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সহিংসতার দিন ওয়াংচুক অনশন ভেঙে গ্রামে ফিরে গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, ওয়াংচুকের উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনতা সহিংস হয়ে উঠেছিল।”

লাদাখের জন্য রাজ্যের মর্যাদার পাশাপাশি ওয়াংচুক লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনারও দাবি করছেন। এর ফলে উপজাতি অঞ্চলগুলোর জন্য স্বশাসিত ব্যবস্থা চালুর পথ সুগম হবে।