জেন-জেড আন্দোলনকারীদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করার বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ভবন শীতল নিবাসে সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি পৌডেল। তাঁর আশঙ্কা, পার্লামেন্ট ভেঙে দিলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হতে পারে।
নেপাল নিউজ লিখেছে, পৌডেল ও কার্কি সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে বৈঠক করেছেন। কার্কির যুক্তি ছিল, সংসদ সদস্য নন–এমন কাউকে প্রধানমন্ত্রী করতে চাইলে সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্ট না ভেঙে তা সম্ভব নয়। তবে রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্ট রেখেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করার পথ খুঁজছেন।
বৃহস্পতিবার রাতভর বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। শুক্রবার সকালে আরও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া এক আইনজীবীকে উদ্ধৃত করে নেপাল নিউজ লিখেছে, “আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ভীমার্জুন আচার্য, বিপিন আধিকারী, পূর্ণমান শাক্য, চন্দ্রকান্ত গ্যাওয়ালি, সূর্য ধুঙ্গেল ও ললিত বাহাদুর বসনেত।
মাই রিপাবলিকা লিখেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় শুক্রবার ভোর ৩টা ৩০ মিনিটে। নেপালি সেনাবাহিনী প্রধান অশোকরাজ সিগডেলও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শীতল নিবাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি পৌডেল শুক্রবারই সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিতে পারেন এবং তাঁকে শপথ পড়াতে পারেন।
গত ৮–৯ সেপ্টেম্বর সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঢেউয়ে পতন ঘটে কেপি শর্মা ওলির সরকারের। সহিংস বিক্ষোভে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
বর্তমানে নেপালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে। বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে সেনারা। তবে বৃহস্পতিবার রাতে কারফিউ শিথিল হয়েছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর এলেও বড় ধরনের উত্তেজনার খবর মেলেনি।
বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভেঙে দিয়ে কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি তুলেছেন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব প্রত্যাখ্যান করছেন।
নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি কার্কি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানের জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন। কৃষক পরিবারের সন্তান কার্কি ৭ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। তাঁর পরিবারের সঙ্গে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিপি কৈরালার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
১৯৭২ সালে মাহেন্দ্র মোরং ক্যাম্পাস থেকে বিএ পাস করা কার্কি ১৯৭৫ সালে ভারতের বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ শেষ করেন। পরে ১৯৭৮ সালে ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি নেন।
তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী জয়প্রকাশ প্রসাদ গুপ্ত দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তাঁর রায়ে দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষের প্রভাবশালী এক প্রধান অপসারিত হওয়ার পর ‘পক্ষপাতদুষ্ট রায় দেওয়ার অভিযোগে’ তৎকালীন ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওয়িস্ট সেন্টার) তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করে। এ কারণে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য বরখাস্তও ছিলেন।