সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হওয়ার পর ভারতের কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘ব্যক্তিগত রসায়ন’ ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে কংগ্রেস।

দলটির প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বৃহস্পতিবার এক্সে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘কূটনীতিতে ব্যক্তিগত রসায়ন কোনো সমাধান নয়। পেহেলগামে হামলার দিন প্রধানমন্ত্রী মোদি ছিলেন সৌদি আরবে। সেই সৌদি আরবই পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করল।’

জয়রাম আরও উল্লেখ করেন, অতীতে মোদি যখন চীন সফর করেছিলেন, কিছুদিন পরই বেইজিং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিকে স্বাগত জানিয়েছিল। ট্রাম্পও ‘অপারেশন সিঁদুর’–এর পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউসে আপ্যায়ন করেছিলেন। এসব উদাহরণ তুলে ধরে কংগ্রেস নেতা বলেন, প্রতিটি ঘটনাই ভারতের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক এবং প্রমাণ করে, মোদির ব্যক্তিগত সম্পর্ক নির্ভর কূটনীতি কার্যকর হয়নি।

গত বুধবার সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বৈঠকের পর এই প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হয়। এতে বলা হয়েছে, দুই দেশের কেউ আক্রান্ত হলে তা উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে ধরা হবে। এ সময় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরও উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চুক্তিটি জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কী প্রভাব ফেলতে পারে, ভারত তা খতিয়ে দেখছে। দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সৌদি–পাকিস্তান সামরিক সম্পর্ক নতুন নয়। ১৯৬০–এর দশক থেকেই সৌদি সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অন্যদিকে, ভারত–সৌদি সম্পর্কও গত দুই দশকে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। মনমোহন সিং ২০১০ সালে সৌদি সফর করেছিলেন, মোদি যান ২০১৬ ও ২০১৯ সালে। যুবরাজ সালমানও ২০১৯ ও ২০২৩ সালে ভারত সফরে আসেন।

চুক্তির সময়সূচি নিয়েও ভারত ভাবছে। কারণ, এর কয়েক দিন আগে ইসরায়েল কাতারের রাজধানী দোহায় বিমান হামলা চালায়, যা আরব দেশগুলো ভালোভাবে নেয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি দৃষ্টিতে চুক্তিটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বার্তা হলেও পাকিস্তানের দিক থেকে এটি ভারতের সম্ভাব্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা।

তবে ভারতের কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, সৌদি–ভারত সম্পর্ক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে কারণে কোনো বিরূপ মন্তব্য করা হবে না। গত অর্থবছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। সৌদি আরবে কর্মরত ২৫ লাখ ভারতীয় ২০২২–২৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন।