রিয়াদ-ইসলামাবাদের নতুন কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পারমাণবিক সক্ষমতা সংক্রান্ত জল্পনা আরও বাড়িয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে এক টিভি টক শোতে খাজা আসিফ ইঙ্গিত দেন, নতুন চুক্তির অধীনে পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা—অস্ত্র ও প্রযুক্তি সহ—সৌদি আরবকে দেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, “আমাদের যা আছে এবং যে সক্ষমতা আমরা আয়ত্ত করেছি, তা এই চুক্তির অধীনে (সৌদি আরবকে) দেওয়া হবে।” তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান সব সময় একটি দায়িত্বশীল পারমাণবিক দেশ হিসেবে কাজ করেছে।

রিয়াদে ১৭ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে অনুষ্ঠিত ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ (এসএমডিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে খাজা আসিফ উপস্থিত ছিলেন। তাই তার বৃহস্পতিবারের মন্তব্যকে পাকিস্তান প্রয়োজনে সৌদি আরবকে পারমাণবিক সহায়তা দিতে পারে—এই বিষয়ে প্রথম স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হয়েছিল।

তবে পরে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র এই চুক্তির অংশ নয়। তিনি বলেন, “চুক্তির আওতায় পারমাণবিক অস্ত্র নেই।”

এই অবস্থায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার ‘কৌশলগত নীরবতা’ অনুসরণ করেছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান জানান, চুক্তি-সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “যে কোনো নীতির মতো পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতিও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠছে। তবে আমাদের অবস্থান সবার জানা আছে।”

পাকিস্তান বারবার বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র ভারতকে প্রতিহত করার জন্য। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, “আমাদের কৌশলগত সক্ষমতা শুধু প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা হুমকি প্রতিহতের জন্য ব্যবহৃত হবে। অন্য কোনো দেশের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা উচিত নয়।”

রিয়াদ-ইসলামাবাদের নতুন চুক্তি দেশ দুটির দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সম্পর্কের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শাফকাত আলী খান বলেন, ১৯৬০-এর দশক থেকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পাকিস্তান-সৌদি সম্পর্কের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। নতুন চুক্তি দুই দেশের পুরোনো ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।

চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অবদান রাখবে এবং কোনো তৃতীয় দেশকে লক্ষ্য করে করা হয়নি। চুক্তির ঘোষণার যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিভিন্ন দিককে উন্নত করতে এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধব্যবস্থা শক্তিশালী করার” উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, আরও কিছু দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, “এ ধরনের চুক্তি রাতারাতি স্বাক্ষর হয় না, কয়েক মাস সময় লেগেছে।”

তিনি বলেন, “এই চুক্তি ঐতিহাসিক। ২০২২-২৩ সালের সংকটের সময় সৌদি আরব আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের সমর্থন প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”

চুক্তি স্বাক্ষরের পর সৌদি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, রিয়াদ পারমাণবিক সুরক্ষা পেতে যাচ্ছে। তবে পাকিস্তান তা অস্বীকার করেছে। এই ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।