জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর ও দুটি অস্থায়ী কন্ট্রোলরুমে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপকমিশনার তানভীর আহমেদসহ অন্তত ১০ জন সদস্য আহত হয়েছেন বলে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে আটক করেছি, তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।’ ঘটনাটির বিষয়ে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

র‌্যাবের অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম পোড়ানোর ঘটনায় মামলা হবে কিনা জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এর আগে, জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের দাবিতে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে কয়েকশ মানুষ দুপুরে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাধা উপেক্ষা করে তারা মঞ্চের সামনে অতিথিদের জন্য রাখা চেয়ারে বসে পড়েন। আরেকটি গ্রুপ গেইটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যায়। আয়োজকরা বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করতে ও সরাতে ব্যর্থ হন।

একপর্যায়ে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। দাবির মুখে সনদের অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফার সংশোধিত ভাষ্যও পড়া হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্রমেই সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বাড়ানো হয় সেনা, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও ডিএমপির সোয়াত টিমের সদস্যদের উপস্থিতি।

দুপুর দেড়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলপ্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় লাঠিচার্য ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। বাইরে থাকা বিক্ষোভকারীরা ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদেরও ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।

সংসদ ভবনের বাইরে ‘জুলাই যোদ্ধারা’ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে এবং আগুন দেয়। পুলিশ পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্য ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ধাওয়া খেয়ে একটি দল খামারবাড়ির দিকে, আরেকটি দল আড়ংয়ের দিকে সরে যায়।

আড়ংয়ের দিকে যাওয়া বিক্ষোভকারীরা সেচ ভবনের সামনে তাঁবু দিয়ে বানানো পুলিশ ও র‌্যাবের দুটি অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম এবং টায়ার-কাঠে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগে সেখানে থাকা আসবাব, সিসিটিভি ক্যামেরা, ফ্যান ও এসিসহ প্রায় সবকিছু ভাঙচুর করা হয়।

পুলিশের লাঠিচার্যে আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নিতে দেখা যায়। পরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পুরো সড়কের নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ এবং জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষ হওয়া পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রাখে।

এ সময় থেমে থেমে সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ ও ধোঁয়ার চিহ্নে উত্তেজনা বিরাজ করছিল সংসদ ভবন এলাকায়।