জাতীয় নির্বাচনের আগে এখন পর্যন্ত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বা সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও দায়ী করেছেন তিনি।

আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে গণমিছিলের আগে আয়োজিত সমাবেশে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন গোলাম পরওয়ার। পাঁচ দফা দাবি আদায়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘কোনো বিশেষ দলের প্রতি দুর্বল হয়ে, কারও চাপে মাথা নত করে প্রশাসনে পছন্দের কর্মকর্তাদের বেছে বেছে পদায়ন করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। ওসি, ডিসি, ইউএনও, আমলা, এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যেও অনেকে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা রাখছেন।’

তবে উপদেষ্টাদের মধ্যে কারা প্রশ্নবিদ্ধ, সে বিষয়ে নাম প্রকাশ করেননি তিনি।

আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে ছোট-বড় সব দলকে সমান সুযোগ দিতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।

সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণ এখন পিআর পদ্ধতির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। ভিন্নমত থাকার অধিকার আছে, তবে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দলের ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার অধিকার কারও নেই।’

১৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হতে যাওয়া জুলাই সনদের আগে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি চূড়ান্ত করার আহ্বান জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেসব সংস্কার বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে, সেগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং গণভোটে পিআর প্রস্তাবও যুক্ত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ যদি পিআর পদ্ধতির পক্ষে মত দেয়, সব দলকে সেটা মানতে হবে। বিপক্ষে মত দিলে জামায়াতও তার দাবি থেকে সরে আসবে।’

জামায়াত ‘জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাবে ছাড় দিয়েছে’ দাবি করে পরওয়ার বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্বপ্ন পূরণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা দলের স্বার্থে ঐক্যের প্রচেষ্টায় বিঘ্ন ঘটানো চলবে না।’

এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ ও ১৪–দলীয় জোটভুক্ত সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিও জানান। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর জামায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘অনেকে দ্রুত নির্বাচন চান, কিন্তু সংস্কারে সহযোগিতা করেন না। জনগণের দাবিকে তোয়াক্কা করেন না। যারা জুলাই বিপ্লবের বিপক্ষে এবং আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলকে রক্ষা করার কথা বলে, তারা ভারতের দালাল। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আরেকটি বিপ্লবের জন্য জামায়াত প্রস্তুত আছে।’

তিনি ১৫ নভেম্বরের মধ্যে গণভোট ও আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান।

ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদও বক্তব্য দেন।

সমাবেশ শেষে বেলা আড়াইটার দিকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে একটি মিছিল বের হয়, যা কাকরাইলে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে স্লোগান দেওয়া হয়—‘এই মুহূর্তে দরকার, পিআর আর সংস্কার’, ‘অবিলম্বে গণভোট, দিতে হবে, দিয়ে দাও’, ‘জামায়াতের ৫ দফা মানতে হবে’, ‘পিআর ছাড়া নির্বাচন, মানি না, মানব না’, ‘এই মুহূর্তে দরকার, পিআর, বিচার, সংস্কার’ ইত্যাদি।