আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য করতে সরকার, প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনকে আরও বলিষ্ঠ, স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বুধবার দুপুরে খুলনায় নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত প্রাক-নির্বাচনী আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, শিক্ষার্থী, নারী নেত্রী ও বিভিন্ন পেশার দুই শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
সভায় সূচনা বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় বলেন, চলমান সংস্কার, বিচারব্যবস্থা ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে যে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে, সেখানে সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা যথাযথভাবে উঠে আসে না। তাদের চাহিদা ও উদ্বেগ সামনে আনতেই নাগরিক প্ল্যাটফর্ম একটি নাগরিক ইশতেহার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এটি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানানো হবে।
শঙ্কা দূর না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়”
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “নাগরিকদের মনে এখনো শঙ্কা ও ভীতি রয়েছে। এই অনিশ্চয়তা দূর করতে না পারলে অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন অর্জন করা যাবে না।” তিনি যোগ করেন, “জনগণ আস্থা না পেলে নির্বাচন কখনোই গণতান্ত্রিক রূপ পায় না। তাই স্বচ্ছতা, উন্মুক্ততা ও সততার ভিত্তিতে সেই আস্থা পুনরুদ্ধার করা এখন সময়ের দাবি।”
খুলনা অঞ্চলের সম্ভাবনা—বাস্তবায়ন এখনও ধীরগতি
খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন-সম্ভাবনার কথা বহুদিন ধরে আলোচিত হলেও প্রত্যাশিত অগ্রগতি এখনো দৃশ্যমান নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। পদ্মা সেতু চালুর পরেও কর্মসংস্থান, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি বৃদ্ধি কিংবা শিল্প সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন চোখে পড়ে না। জমির দাম বাড়লেও অর্থনৈতিক প্রবাহ সেই হারে এগোয়নি।
তিনি বলেন, “নতুন প্রজন্মের শ্রমিককে আকৃষ্ট করতে অঞ্চলভিত্তিক শিল্পায়ন অত্যন্ত জরুরি। কৃষিভিত্তিক শিল্প, চিংড়ি উৎপাদন, মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পর্যটন খাতে খুলনার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে বড় পর্যটন শিল্প গড়ে তোলাও সম্ভব।”
আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান
ড. দেবপ্রিয় খুলনা অঞ্চলের জন্য পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। তিনি বলেন, “যারা এখানে থেকে নির্বাচন করবেন, তাদের অবশ্যই আঞ্চলিক উন্নয়নের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। পরে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যম জবাবদিহিতার মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।”
বন্দর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা অপরিহার্য
বন্দর ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী অর্থনীতির জন্য দক্ষ ও আধুনিক বন্দরব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও বিনিয়োগ অবশ্যই করতে হবে, তবে তা হতে হবে স্বচ্ছ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “ভালো সংস্কার যদি ভুল পদ্ধতিতে করা হয়, তাহলে তার সুফল পাওয়া যায় না। বন্দর সংস্কারের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক তড়িঘড়ি ও অসচ্ছতা ভালো উদ্যোগকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”
স্থানীয় দাবিদাওয়াও তুলে ধরেন নাগরিকরা
সভায় নাগরিক নেতৃবৃন্দ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ, শিল্পের উন্নয়ন, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জন, সুন্দরবনভিত্তিক পর্যটন শিল্প বিকাশ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নানা দাবি তুলে ধরেন।
সভায় সমাপনী বক্তব্য দেন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতি
পরামর্শ সভায় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন
বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু,
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, এনসিপির ডা. আব্দুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
পরামর্শ সভায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আস্থা পুনরুদ্ধার, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নই হবে তাদের প্রধান প্রত্যাশা।
পূর্বের পোস্ট :