ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ব্যালট পেপার নীলক্ষেতে ছাপানো হয়েছিল বলে স্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে অভিযোগ তুলেছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, মূল ভেন্ডরের অনুমতিতে সহযোগী একটি প্রতিষ্ঠান নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপালেও প্রশাসনকে সে বিষয়ে অবহিত করা হয়নি।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান এ কথা জানান। তিনি বলেন, “ভেন্ডর অবহিত না করায় নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানোর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জানা ছিল না। তবে ব্যালট ছাপার স্থান বা সংখ্যা সুষ্ঠু নির্বাচনকে কোনোভাবে প্রভাবিত করে না।”
ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৯ সেপ্টেম্বর। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্যমতে, এবারের নির্বাচনে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ভোটে ছাত্রশিবিরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ছাত্রদল। তবে কোনো পদেই ছাত্রদলের প্রার্থীরা বিজয়ী হননি।
ভোটের ১৩ দিন পর, ২৬ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু নির্বাচনে ১১টি অনিয়মের অভিযোগ তোলে ছাত্রদল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল—ব্যালট ছাপা হয়েছে নীলক্ষেতের একটি ছাপাখানায়, যা নিয়মবহির্ভূত।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, “ব্যালট পেপার পুরোপুরি প্রস্তুত করতে ছাপার পর নির্দিষ্ট পরিমাপে কাটিং, সুরক্ষা কোড আরোপ, ওএমআর মেশিনে প্রি-স্ক্যান এবং বিভিন্ন স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এসব ধাপ শেষ করেই যথাযথ সতর্কতার সঙ্গে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।”
তিনি জানান, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত ভেন্ডরের অনুমতিতে একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। রেকর্ডসংখ্যক ভোটার ও প্রার্থীর কারণে দ্রুততার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সেই সহযোগী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেই নীলক্ষেতে ছাপার কাজ করে।
উপাচার্য বলেন, “ভেন্ডরদের দেওয়া তথ্যমতে, নীলক্ষেতে ২২ রিম কাগজ দিয়ে ৮৮ হাজার ব্যালট ছাপানো হয়। পরে প্রিন্টিং, কাটিং, স্ক্যানিংয়ের পর ৮৬ হাজার ২৪৩টি ব্যালট চূড়ান্তভাবে সরবরাহ করা হয়। অবশিষ্ট ব্যালট প্রচলিত পদ্ধতিতে ধ্বংস করা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৪টি ব্যালট প্রস্তুত করা হয়। মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন; প্রত্যেকের জন্য ছয়টি করে ব্যালট। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২৯ হাজার ৮২১ জন, ব্যবহৃত ব্যালট ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৬টি। অবশিষ্ট ব্যালট ৬০ হাজার ৩১৮টি।
ছাত্রদল প্রার্থীদের অভিযোগ, ভোট শুরুর আগেই ব্যালটে নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে সিল মারা এবং ভোটারদের স্বাক্ষর যুক্ত ছিল। তারা সিসিটিভি ফুটেজ ও ভোটার তালিকা দেখার আবেদন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যকর সাড়া দেয়নি।
এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “যদি কোনো প্রার্থী সুনির্দিষ্ট সময় বা ঘটনার ভিডিও দেখতে চান, তাহলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত প্রতিনিধি বা বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে তা পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে।”
ভোটার তালিকা বিষয়ে তিনি বলেন, “কারও স্বাক্ষর পর্যালোচনার যৌক্তিক আবেদন করা হলে সেটিও নির্ধারিত প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে দেখানো যেতে পারে।”