তেত্রিশ বছর পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ-জাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু ভিপি এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাজহারুল ইসলাম জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ভিপি পদে আব্দুর রশিদ জিতু ৩৩৩৪ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী ছাত্রশিবিরের আরিফুল্লাহ আদিব পান ২৩৮৯ ভোট।
অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মাজহারুল ইসলাম ৩৯৩০ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাগছাসের প্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম পান ১২৩৮ ভোট।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ফেরদৌস আল হাসান ২৩৫৮ ভোট এবং আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা ৩৪০২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ১৫টিতে জয়ী হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। বাকি চারটি পদের মধ্যে ভিপিসহ তিনটি পদে স্বতন্ত্র এবং একটিতে বাগছাস প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
কার্যকরী সদস্যের ছয়টি পদেই জয়ী হয়েছেন শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা।
অন্যান্য সম্পাদকীয় পদে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন—
• শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক: আবু ওবায়দা ওসামা (শিবির প্যানেল)
• পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক: মো. শাফায়েত মীর (শিবির প্যানেল)
• সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক: মো. জাহিদুল ইসলাম (শিবির প্যানেল)
• সাংস্কৃতিক সম্পাদক: মহিবুল্লাহ শেখ জিসান (স্বতন্ত্র)
• সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক: মো. রায়হান উদ্দীন (শিবির প্যানেল)
• নাট্য সম্পাদক: মো. রুহুল ইসলাম (শিবির প্যানেল)
• ক্রীড়া সম্পাদক: মাহমুদুল হাসান কিরণ (স্বতন্ত্র)
• সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী): ফারহানা আক্তার লুবনা (শিবির প্যানেল)
• সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ): মো. মাহাদী হাসান (শিবির প্যানেল)
• তথ্যপ্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক: মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন (শিবির প্যানেল)
• সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক: আহসাব লাবিব (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস)
• সহ-সমাজসেবা সম্পাদক (নারী): নিগার সুলতানা (শিবির প্যানেল)
• সহ-সমাজসেবা সম্পাদক (পুরুষ): মো. তৌহিদ হাসান (শিবির প্যানেল)
• স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পাদক: হুসনী মোবারক (শিবির প্যানেল)
• পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক: মো. তানভীর রহমান (শিবির প্যানেল)
কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন— মো. তরিকুল ইসলাম, মো. আবু তালহা, মো. মহসিন, নাবিলা বিনতে হারুণ, ফাবলিহা জাহান ও নুসরাত জাহান ইমা (সকলেই শিবির প্যানেল)।
২৫টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে অধিকাংশই জয়ী হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’।
এর মধ্য দিয়ে ডাকসুর পর আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নিয়ন্ত্রণ নিল ইসলামী ছাত্রশিবির, যারা এর আগে কখনো জাকসুতে কোনো পদ পায়নি।
ডাকসু নির্বাচনের দুই দিনের মাথায় ঢাকার অদূরে সাভারের এই ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত ভোটগ্রহণ নিয়ে সারা দেশের মানুষের আগ্রহ ছিল।
ফলাফল ঘোষণার আগে মুক্তিযুদ্ধ, জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনে শহীদ এবং সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌসের আত্মার মাগফেরাত কামনায় এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর জাকসুর ফলাফল ঘোষণার আগে ২১টি হল সংসদের ফল ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর এ ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার দিনভর ভোট শেষে প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোট পড়ে বলে নির্বাচন কমিশন জানায়। ভোট গণনা শুরু হয় বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে, দীর্ঘ সময় পর শনিবার সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
ভোটগ্রহণে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগের মধ্যে অধিকাংশ প্যানেলের বর্জন, দীর্ঘ সময় ধরে ভোটগণনার কাজ এবং দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনাও যুক্ত হয়েছে।
মূল জটিলতা দেখা দেয় ওএমআর মেশিনের বদলে হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্তে। জামায়াত সংশ্লিষ্ট এক কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন কেনার অভিযোগ ওঠায় কমিশন হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নেয়। এ কারণে সময় দীর্ঘ হয়।
১৯৭২ সালে শুরু হওয়া জাকসু নির্বাচনের এবারের দশম আয়োজন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ ছিল শুরু থেকে। ছাত্র সংগঠনগুলোও ভোটের দাবিতে সোচ্চার ছিল।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কয়েক দফা পেছানোর পর অবশেষে ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এতে ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, বাগছাস, বাম-প্রগতিশীল, স্বতন্ত্রসহ অন্তত সাতটি প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নেন।