বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা এবং তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার রাষ্ট্রপরিচালনার নীতি প্রসঙ্গে বলেন, বাকশাল কায়েম করে শেখ মুজিব স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, আর সেই বাকশালের চেতনাধারী হয়ে শেখ হাসিনা হয়েছেন ফ্যাসিস্ট শাসক।

সাত নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শনিবার কাকরাইলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন বলেন, ১৯৭৫ সালে এই দিনটি জাতির জীবনে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দিন। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন সাত নভেম্বর।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। নিঃসন্দেহে এটি দুঃখজনক ঘটনা। কিন্তু গণতন্ত্রের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে অগণতান্ত্রিক উপায়ে রক্তপাতের মাধ্যমেই জাতিকে সমাধানের পথ খুঁজে নিতে হয়, যেমনটা ঘটেছিল জুলাই অভ্যুত্থানেও,” বলেন সালাহউদ্দিন।

শেখ মুজিবকে স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি বলার কারণ ব্যাখ্যা করে সালাহউদ্দিন বলেন, মাত্র ১৩ মিনিটে সংবিধান সংশোধন করে বাকশাল কায়েম করেন শেখ মুজিব। কোনো ধরনের নির্বাচন ছাড়া এই বাকশালে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন তিনি।

নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় থাকাই আওয়ামী গণতন্ত্রের নমুনা। শেখ মুজিব থেকে শেখ হাসিনা—এভাবেই ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন তাঁরা। আওয়ামী লীগের রক্তে, চেতনায়, ডিএনএতে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই,” বলেন সালাহউদ্দিন।

কবি হাসান হাফিজুর রহমান ১৯৮৩ সালে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতার দলিল সংকলন করেছিলেন। সেই দলিলের সূত্র ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ যতই বলুক স্বাধীনতার ঘোষণা শেখ মুজিব দিয়েছেন, দালিলিক প্রমাণ বলে ভিন্ন কথা। স্বাধীনতার ঘোষণা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি।

২৫ মার্চ রাতে কর্নেল জানজুয়াকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করেন জিয়াউর রহমান। এরপর ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের ষোলশহর থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তিনি। প্রভিশনাল চিফ অব স্টেট হিসেবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তিনি,” বলেন বিএনপির এই নেতা।

তাজউদ্দিন আহমদের স্বজনেরা বইয়ে লিখেছেন, ২৫ মার্চ রাতে টেপ রেকর্ডার নিয়ে শেখ মুজিবের কাছে তাজউদ্দিন নিজে গিয়েছিলেন। শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে রাজি হননি। অথচ ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, যথাযথভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন শেখ মুজিব। “এটা কীভাবে সম্ভব?” প্রশ্ন তোলেন সালাহউদ্দিন।

স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আওয়ামী লীগ যা করেছে, তাতেই প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি মিথ্যার রাজনীতি,” বলেন তিনি।

শেখ মুজিবকে বিএনপি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে স্বীকার করে এবং স্বাধীনতার সময়ে তাঁর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তবে শেখ মুজিব স্বাধীনতার পর যা করেছেন, সেসবও আলোচনায় আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

দেশের মানুষ শেখ মুজিবের মাধ্যমে মুক্তি, অধিকার, গণতন্ত্র ফিরে পেতে চেয়েছিল। অথচ তিনি নিজ হাতে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছেন। একইভাবে এই দেশের মানুষের অধিকারকে কবর দিয়েছেন শেখ হাসিনা,” বলেন সালাহউদ্দিন।

শেখ হাসিনাকে নিয়ে তিনি আরও বলেন, “শেখ মুজিব অন্তত সংবিধান সংশোধন করে বাকশাল কায়েম করেছিলেন, কিন্তু শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের মুখোশ পরে ফ্যাসিবাদ চালিয়েছেন।”

আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর লকডাউন ডেকেছে এবং বিএনপি এই লকডাউন কর্মসূচি প্রতিহত করবে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আওয়ামী লীগের মস্তিষ্ক বিকৃত হয়েছে। জনগণ যদি তাদের ডাকে লকডাউনই পালন করে, তাহলে গত বছর ৫ আগস্ট কেন তাদের এভাবে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিল?”

১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার একটি মামলার রায় হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “এই রায়কে কেন্দ্র করেই এক লকডাউন ডাকা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলি, দুঃসাহস থাকলে দেশে আসুন, আদালতে বিচারের মুখোমুখি হোন।”