নিজের বাবার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচার’ হচ্ছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময় তাঁর বাবা মির্জা রুহুল আমিন ছিলেন ভারতে।
আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানান বিএনপি মহাসচিব। কী ধরনের মিথ্যাচার হচ্ছে, তা স্পষ্ট করে উল্লেখ না করলেও তাঁর বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায়—সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবাকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে প্রচারণার প্রতিক্রিয়াতেই এই মন্তব্য করেছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল লিখেছেন, ‘আমার বাবা সম্পর্কে মিথ্যাচার শুরু হয় গত আওয়ামী রেজিমে (শাসনামল)। দুঃখজনকভাবে গত এক বছর ধরে একটি গোষ্ঠী, যারা নিজেদের জুলাইয়ের আন্দোলনের অংশীদার মনে করে, তারাও এই মিথ্যাচারে অংশ নিচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের নেতারা বরাবরই বলে আসছেন, ফখরুলের বাবা মুসলিম লীগ নেতা মির্জা রুহুল আমিন একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি নতুন করে সেই প্রসঙ্গ ওঠার পরই এ প্রতিক্রিয়া দেন বিএনপি মহাসচিব।
ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থানরত ফখরুল ফেসবুক পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘কিছু কথা বলা খুব জরুরি আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ, তরুণ প্রজন্মের জন্য। এসব কথা বলার কখনো প্রয়োজন মনে করিনি। জীবনের এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে যখন দেখি সমাজে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে মিথ্যার চাষ করছে, তখন বলা আরও জরুরি।’
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি লেখেন, ‘আমার আব্বা মরহুম মির্জা রুহুল আমিন ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ আমার নানাবাড়ি যান আমার দুই ছোট ভাই, দুই বোন এবং মাকে নিয়ে। এরপর এপ্রিলে চলে যান ভারতের ইসলামপুরে। রিফিউজি ক্যাম্পে (শরণার্থীশিবিরে) ছিলেন যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময়। ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও স্বাধীন হয়। আমার বাবা ঠাকুরগাঁওয়ে ফিরে আসেন তখনই। ফিরে এসে দেখেন, সব লুট হয়ে গেছে। আমার মরহুম মা তাঁর গয়না বিক্রি করেন। আমি যোগ দিই অর্থনীতির শিক্ষকতায়, প্রথম বেতন তুলে দিই আম্মার হাতে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘১৯৭১–এর পরে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এভাবেই ধ্বংসস্তূপ থেকে তৈরি করেছে জীবন। আমার বাবার নামে কোথাও কোনো মামলা হয়নি। ঠাকুরগাঁও জেলার যা কিছু আধুনিক, এর শুরু আমার বাবার হাতেই। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ফাউন্ডেশন গঠিত হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের নামকরা রাজনীতিকেরা। ১৯৯৭ সালে তাঁর মৃত্যুতে সরকারি শোক প্রকাশ করা হয়।’
নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত বছর জুলাইয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশকে আশা দেখিয়েছে। আমি আশা করব, নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশে মিথ্যার চাষ আমাদের ছেলেমেয়েরা করবে না। এরা সত্যের পথে থাকবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মেধা, বুদ্ধিমত্তা, সততা আর নীতিতে। শঠতা আর মিথ্যা দিয়ে জনপ্রিয়তা কেনা যায়, কিন্তু দেশ গড়া যায় না।’
তিনি আহ্বান জানান, ‘আসুন, আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা, দেশপ্রেম আর নতুন প্রজন্মের সাহস ও দেশপ্রেম দিয়ে তৈরি করি একটি মর্যাদাপূর্ণ, সৎ ও মানবিক বাংলাদেশ।’
পবিত্র কোরআনের সুরা আল–হুজুরাতের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে পোস্টটি শেষ করেছেন বিএনপি মহাসচিব—‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান তো পাপ।’
পোস্টে তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধে দিনাজপুর’ বইয়ের একটি পৃষ্ঠা যুক্ত করেছেন, যেখানে উত্তম পুরুষে লেখা হয়েছে—‘আমার বাবাও কিন্তু মুসলিম লীগার ছিলেন। তিনি সে সময় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আমার বাবাও মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে চলে গিয়েছিলেন।’
পূর্বের পোস্ট :