ঢাকা, সোমবার (৬ অক্টোবর):
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি জানিয়েছেন, ভোটের সময় দেশে থাকার আশাবাদী।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেন, ‘দ্রুতই মনে হয়, দ্রুতই ইনশাআল্লাহ।’
দেশে ফেরার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের সময় জনগণের সঙ্গে থাকতে চাই। যেখানে জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেখানে দূরে থাকার প্রশ্নই আসে না। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচনের সময় তাদের মাঝেই থাকতে, ইনশাআল্লাহ।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘জি, ইনশাআল্লাহ।’
বিবিসি বাংলার সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব সোমবার সকালে প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমটি। এতে দেশে ফেরা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব, নির্বাচনি কৌশল, বিএনপির মনোনয়নের মানদণ্ড, জামায়াতের সম্ভাব্য জোট এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হবে মঙ্গলবার সকালে।
দেশে না ফেরার কারণ জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, ‘কিছু সংগত কারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে উঠেনি এখনো। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়। ইনশাআল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসব।’
শঙ্কা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রকম শঙ্কার কথা তো আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে শুনেছি। সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও শঙ্কার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী পদ ও বিএনপির নেতৃত্ব প্রসঙ্গে
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা আছে কি না—এমন প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি একজন রাজনৈতিক দলের সদস্য, একজন কর্মী। নির্বাচনের সঙ্গে রাজনীতির ওতপ্রোত সম্পর্ক। জনগণের সম্পৃক্ত একটি নির্বাচন হলে আমি দূরে থাকতে পারব না, মাঠেই থাকব ইনশাআল্লাহ। তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে, এটি আমার সিদ্ধান্ত নয়।’
খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি এখনো বলা যাচ্ছে না। উনার শারীরিক সক্ষমতার ওপর বিষয়টি কিছুটা নির্ভর করছে।’
বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব নিয়ে প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, ‘রাজনীতি পরিবারকরণ নয়, এটি সমর্থনের ভিত্তিতে হয়। যে সংগঠিত করতে পারে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে, দলকে সামনে এগিয়ে নিতে পারে—সেই এগিয়ে যাবে।’
নির্বাচন ও জোট রাজনীতি প্রসঙ্গে
বিএনপি এককভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় ৬৪টি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কাজ করেছি। রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জন্য ৩১ দফা দিয়েছি। আমরা চাই, রাজপথে যারা ছিল, তাদের সবার মতামত নিয়েই রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে।’
জামায়াতের সম্ভাব্য জোট নিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনও দল যদি সংবিধান ও আইনের ভেতরে থেকে রাজনীতি করে, তাহলে এতে কোনও উদ্বেগের কারণ দেখি না।’
অন্যদিকে, জামায়াত আলাদা জোট করলে তা বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, কেন হবে? নির্বাচন মানেই প্রতিযোগিতা।’
আওয়ামী লীগ ও বিচার প্রসঙ্গ
আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা উচিত কি না—এমন প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, ‘যদি তারা অন্যায় করে থাকে, দেশের আইন অনুযায়ী বিচার হবে। যে দল জনগণের সমর্থন হারিয়েছে, জনগণ যদি সমর্থন না করে, তাদের টিকে থাকার কারণ নেই। সবচেয়ে বড় বিচারক জনগণ।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে
গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে প্রশ্নে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই আন্দোলনের কৃতিত্ব বাংলাদেশের জনগণের। এটি কোনও একক দলের নয়। ৬৩ জন শিশু শহীদ হয়েছে, দুই হাজার মানুষ নিহত, প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এখন আমাদের সবার দায়িত্ব তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো।’
চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় সাত হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে সবাই এসব অভিযোগে জড়িত নয়। অনেক সময় পারিবারিক সম্পত্তি বিরোধকেও রাজনৈতিক রঙ দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে পুলিশিং করা আমাদের কাজ নয়, সেটি সরকারের দায়িত্ব। আমরা প্রশ্ন রাখছি, পুলিশ তাদের কাজ করছে না কেন।’
পূর্বের পোস্ট :