মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সাজায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অসন্তোষ প্রকাশ করলেও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফাঁসির আদেশ দিলেও এই মামলার রাজসাক্ষী হওয়ায় আইজিপি মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায় নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সোমবার এনসিপি কার্যালয়ে হাসিনা-কামালের রায় সন্তোষ প্রকাশ করা হলেও সাবেক আইজিপির রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে নাহিদ বলেন, "যদিও আইজিপি মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন, কিন্তু তিনি যে অপরাধ করেছেন, তার বিপরীতে আদালত যা সাজা দিয়েছে তা অনেক কম।"

আইজিপি মামুনের আরও বড় সাজা হওয়া দরকার ছিল উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, "মামুনের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। তার রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের আহ্বান জানাচ্ছি।"

আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সারজিস বলেন, "সাবেক আইজিপি মামুন আসলে সিস্টেমের শিকার। তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, চাকরিজীবনে তিনি সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। সেজন্য বাধ্য হয়ে হাসিনার হুকুম মানতে হয়েছে তাকে।"

তিনি আরও বলেন, "রাজসাক্ষী হয়ে আইজিপি মামুন সত্য তুলে ধরেছেন। এতে করে মামলার রায় তরান্বিত হয়েছে। যদিও গণহত্যার দায়ভার তার ওপরও বর্তায়, কিন্তু সবদিক বিবেচনায় আমরা মনে করি আদালত তাকে যে শাস্তি দিয়েছে তা উপযুক্ত।"

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। গত ১২ মে প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা, এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।

এর ভিত্তিতে ১ জুন ট্রাইব্যুনালে হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ওই দিনই ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেন। এরপর ১০ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এক পর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে (অ্যাপ্রুভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের করা আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন তিনি।