যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ বেটিং এবং মাফিয়া পরিচালিত পোকার জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে দেশটির তদন্ত সংস্থা এফবিআই। অভিযানে এনবিএ তারকা টেরি রোজিয়ার, কোচ চনসি বিলাপসসহ কয়েক ডজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ফেডারেল প্রসিকিউটররা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন মায়ামি হিট দলের খেলোয়াড় টেরি রোজিয়ার ও পোর্টল্যান্ড ট্রেইল ব্লেজার্সের প্রধান কোচ চনসি বিলাপস।

বিবিসি জানায়, ৩১ বছর বয়সী রোজিয়ারসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে খেলায় ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত পাওয়ার ভান করে বেটিংয়ের ফলাফল প্রভাবিত করার অভিযোগে। অন্যদিকে বিলাপসসহ ৩১ জনকে ধরা হয়েছে অবৈধ পোকার খেলায় জালিয়াতির অভিযোগে।

প্রসিকিউটররা জানান, নিউ ইয়র্কের পাঁচটি বড় অপরাধচক্রের মধ্যে চারটির সদস্যদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে এ চক্রে। বিখ্যাত ক্রীড়া তারকাদের সঙ্গে পোকার খেলতে প্রলুব্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে লাখ লাখ ডলার হাতিয়ে নেওয়া হত।

তারা ব্যবহার করত বিশেষ কনট্যাক্ট লেন্স ও চশমা, যা চিহ্নিত তাস শনাক্ত করতে সক্ষম, এমনকি এক্স-রে টেবিলও, যাতে উল্টো রাখা তাসের নিচের দিক দেখা যেত।

এনবিএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং রোজিয়ার ও বিলাপসকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা এসব অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। খেলাধুলার সততা বজায় রাখা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

রোজিয়ারের আইনজীবী সিবিএস নিউজকে বলেন, ‘টেরি জুয়াড়ি নন। তিনি এই আইনি লড়াই থেকে পিছু হটবেন না, আদালতে প্রমাণ করবেন যে তিনি নির্দোষ।’

রোজিয়ারকে বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো আদালতে হাজির করা হয়; ছয় মিলিয়ন ডলারের বাড়ি জামানত রেখে তিনি জামিন পান। ওরেগনের পোর্টল্যান্ডে গ্রেপ্তার বিলাপসও জামিনের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি অঙ্গরাজ্যে এই অভিযান পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক জালিয়াত চক্রের মুখোমুখি হয়েছি, যারা বহু বছর ধরে কোটি কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়েছে।’

নিউ ইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের অ্যাটর্নি জোসেফ নোচেল্লা জুনিয়র বলেন, ‘অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগে কাউকে দোষী বলা যায় না। তবে যেভাবে তারা এতদিন জুয়া জিতে আসছিল, সেই খেলা এখন শেষ।’

এনবিএ ম্যাচে ফলাফল প্রভাবের অভিযোগ

প্রসিকিউটরদের দাবি, রোজিয়ার ও তার সহযোগীরা গোপন তথ্য ব্যবহার করে বেটিংয়ের ফলাফল প্রভাবিত করতেন।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সাতটি এনবিএ ম্যাচ এই তদন্তের আওতায় এসেছে, যার একটি ছিল শার্লট হর্নেটস বনাম নিউ অরলিন্স পেলিকানস ম্যাচ।

অভিযোগে বলা হয়, রোজিয়ার এক বন্ধুকে আগেই জানিয়েছিলেন যে তিনি চোটের ভান করে ম্যাচ ছেড়ে যাবেন। পরে ওই বন্ধু ও তার সহযোগীরা বাজি ধরে ২ লাখ ডলারের বেশি জেতে।

সেই ম্যাচে রোজিয়ার মাত্র পাঁচ পয়েন্ট তুলেছিলেন; অথচ সাধারণত তিনি গড়ে ২১ পয়েন্ট তুলতেন।

নিউ ইয়র্ক পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, ‘এই মৌসুমে তার খেলা শেষ—চোটের কারণে নয়, অসততার কারণে।’

পোকার জালিয়াত চক্রে মাফিয়া সম্পৃক্ততা

দ্বিতীয় মামলায় ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অবৈধ পোকার খেলায় জালিয়াতি ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে নিউ ইয়র্কের কুখ্যাত বোনান্নো, জেনোভেস ও গামবিনো অপরাধচক্রের ১৩ সদস্য রয়েছেন।

অ্যাটর্নি নোচেল্লা বলেন, ‘লাস ভেগাস, মায়ামি, ম্যানহাটন ও হ্যাম্পটনসে তারা সাবেক তারকা খেলোয়াড়দের সঙ্গে পোকার খেলায় ভুক্তভোগীদের প্রলুব্ধ করত। প্রতিটি খেলায় তারা কয়েক লাখ ডলার পর্যন্ত হারাতেন।’

চক্রটি ব্যবহার করত বিশেষ কার্ড শাফলিং মেশিন, চিহ্নিত তাস শনাক্তকারী চশমা এবং উল্টো কার্ড দেখা যায় এমন এক্স-রে টেবিল।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা মোট ৭০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়; একজন ভুক্তভোগী একাই হারান ১৮ লাখ ডলার।

নিউ ইয়র্ক পুলিশ কমিশনার টিশ বলেন, ‘কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে সংগঠিত অপরাধচক্রগুলো ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করত।’

এই মামলায় জুয়াচুরি, চাঁদাবাজি, ব্যাংক জালিয়াতি ও অবৈধ জুয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।