ভেনেজুয়েলার জনগণের ‘গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে’ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো।
নরওয়ের নোবেল ইন্সটিটিউট শুক্রবার অসলোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ১০৬তম নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে। এ বছর পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার।
গত বছর পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গঠনে ভূমিকার জন্য শান্তিতে নোবেল পেয়েছিল হিরোশিমা ও নাগাসাকির বোমা হামলার বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সংগঠন ‘নিহোন হিদাংকিয়ো’।
২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা নিকোলাস মাদুরো সরকারের অন্যতম কড়া সমালোচক ৫৮ বছর বয়সী মাচাদো একজন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
২০২৪ সালে ভেনেজুয়েলার আদালত তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দেয়, যাতে তিনি মাদুরোকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারেন।
নোবেল কমিটি তাকে এমন এক নারী হিসেবে বর্ণনা করেছে, যিনি ‘অন্ধকার সময়েও গণতন্ত্রের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন’।
গণতন্ত্রের পক্ষে নিরলস সংগ্রামের স্বীকৃতি’ হিসেবে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার তারই প্রাপ্য বলে জানিয়েছে কমিটি।
মাচাদো গত নির্বাচনের আগে ভেনেজুয়েলার বিভক্ত বিরোধীদলগুলোকে একত্র করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি নিজে নির্বাচন করতে না পারলেও তার বিকল্প প্রার্থী এডমুন্ডো গনজালেসের পক্ষে জনসমর্থন সংগঠিত করেন।
ভোটকেন্দ্রের প্রাথমিক ফলাফল গনজালেসের জয়ের ইঙ্গিত দিলেও সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করে।
আত্মগোপনে থেকেও মাচাদো গণতন্ত্রের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং দেশ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এ বছরের জানুয়ারিতে এক বিক্ষোভে অংশ নিতে গিয়ে তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
নোবেল কমিটি বলেছে, “কর্তৃত্ববাদীরা যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন স্বাধীনতার পক্ষে লড়া সাহসীদের স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—যারা রুখে দাঁড়ায় এবং প্রতিরোধ করে।”
মাচাদো এমন সময়ে এ পুরস্কার পেলেন যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন যে নোবেল শান্তি পুরস্কার তারই প্রাপ্য। ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোরও কট্টরবিরোধী।
গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে হামাস ও ইসরায়েলের চুক্তি ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে বাস্তবায়িত হলেও নোবেল কমিটি এর আগেই এবারের বিজয়ীর নাম নির্ধারণ করেছিল।
নোবেল শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান জর্গেন ভাটনে ফ্রিডনেস জানিয়েছেন, “প্রতি বছরই নানা প্রচারণা ও গণমাধ্যমের উত্তেজনা থাকে, কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নেই শুধুমাত্র আলফ্রেড নোবেলের আদর্শ ও উইলের ভিত্তিতে।”
পূর্বের পোস্ট :