রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক মতভিন্নতা রেখেই শুক্রবার বিকেলে স্বাক্ষর হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে এই সনদ তৈরি করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা এবং ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এই সনদে স্বাক্ষর করবেন বলে জানা গেছে।

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ফেসবুকে এনসিপির মিডিয়া গ্রুপে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

দলটি বলেছে, আইনি ভিত্তি ছাড়া এবং আদেশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলে সেটা মূল্যহীন হবে। এ কারণে শুক্রবারের জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না এনসিপি।

এ ছাড়া বাম ধারার চারটি দলও জানিয়েছে, তারা সনদে সই করবে না। তবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আজ জুলাই সনদে সই করার বিষয়ে ইতিবাচক।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা এবং ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এই সনদে সই করার কথা রয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন আশা করছে, সব দলই জুলাই সনদে সই করবে। সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সেখানে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তারা আশা করছেন, এনসিপিসহ সবাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। আজকের পরও সনদে সই করার সুযোগ থাকবে। কমিশনের মেয়াদের (৩১ অক্টোবর) মধ্যেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের একটি সুস্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপন করবে ঐকমত্য কমিশন।

আলী রীয়াজ বলেন, সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের আলোচনা অব্যাহত আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনা হবে। সনদ বাস্তবায়নে যেন কোনো রকম ব্যত্যয় না ঘটে, তার দায়িত্ব কমিশনের।

এদিকে সকাল থেকে জুলাই শহীদের পরিবার ও আহত জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ ২০২৫ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নিয়েছেন।

দেখা যায়, অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অতিথিদের জন্য সাজিয়ে রাখা চেয়ারে জুলাই শহীদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা অবস্থান নিয়ে বসে আছেন। অনুষ্ঠানমঞ্চ ও অতিথিদের জন্য রাখা এই চেয়ারের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।

বিক্ষোভকারীরা আজ সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রবেশের ফটক টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা দক্ষিণ প্লাজায় মঞ্চের সামনে চলে যান। তাঁদের বাধা দেওয়া চেষ্টা করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে বিক্ষোভকারীরা অতিথিদের চেয়ারে বসে পড়েন।

জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের মূল দাবি- শহীদ পরিবার-জুলাই যোদ্ধাদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান। শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের সুরক্ষা ও দায়মুক্তি আইন করে তার বাস্তবায়ন। এসব বিষয় জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করতে অবস্থান কর্মসূচি বেছে নিয়েছেন তারা।

শুক্রবার বিকাল চারটায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।