এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও সোয়া লাখ শিক্ষার্থী বিভিন্ন কলেজ-মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হননি। ফলে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়েই তাদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চলতি বছরের এসএসসি ও দাখিল উত্তীর্ণ হওয়ার পর একাদশে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৬ হাজার ৫৯৭ জন।
তবে চার ধাপে আবেদন করে বিভিন্ন কলেজ ও মাদ্রাসায় ১০ লাখ ৮০ হাজার ৯১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। সে হিসাবে ১ লাখ ২৬ হাজার শিক্ষার্থী একাদশে ভর্তির চেষ্টাও করেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সেই শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা করছেন। কী কারণে তারা একাদশের ভর্তিতে নেই, সে ব্যাপারে তথ্য পেতে বিশদ গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
তবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি বলছে, একাদশে ভর্তি না হওয়া শিক্ষার্থীরা কোথায়, সেই তথ্য পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ভর্তির তথ্য পেলে আরও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।
গত ১০ জুলাই চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী পাস করেছিলেন।
পরে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন নিয়ে গত ১০ আগস্ট ফল প্রকাশিত হলে পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৮ হাজার ৩৫৪ জন। এসএসসি ও সমমান উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষা উত্তীর্ণ ছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৭ জন।
কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ভর্তি প্রক্রিয়ায় দশটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি বিএম, বিএমটি, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া চলেছে আলাদা। তাই কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনের শিক্ষার্থীদের বাদ দিলে এসএসসি ও দাখিল উত্তীর্ণ হওয়া একাদশে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৬ হাজার ৫৯৭ জন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, “১০ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে বাকি শিক্ষার্থীরা কোথায়— সেই তথ্য পেতে আমাদের আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।”
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ভর্তির তথ্য পেলে আমরা হয়ত সুস্পষ্টভাবে বলতে পারব ওই শিক্ষার্থীরা কোথায়।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর আশঙ্কা, ওই ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়ে ঝরে পড়েছেন। এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
মোহাম্মদ আলী বলেন, “ওই শিক্ষার্থীরা আসলে কি কারণে ভর্তি প্রক্রিয়ায় নেই তা বুঝতে বিশদ গবেষণা প্রয়োজন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে বোঝা যাচ্ছে ওই শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তির চেষ্টা করছেন না। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশসহ বেশ কিছু কারণে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়তে পারেন।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ভর্তি প্রক্রিয়ার বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিত করা। নন ফরমাল এডুকেশন, ভোকেশনাল ডিপ্লোমা কোর্স ইত্যাদি তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে না পারলে এ সোয়া লাখ শিক্ষার্থী সমাজের দায়ে পরিণত হবেন।”