দ্রুত ফ্যাসিবাদমুক্ত নির্বাচন, নতুন সংবিধান ও বিজ্ঞানভিত্তিক ইসলামী শিক্ষানীতির দাবি জানিয়ে সোমবার প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করলো মুসলিম জাতীয়তাবাদী ছাত্র সংগঠন ‘বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ’।
এ উপলক্ষে সোমবার বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মাহফিলে দোয়া পরিচালনা করেন মসজিদের সিনিয়র খতিব নাজির মাহমুদ।
মাহফিলে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ বক্তৃতা করেন। তিনি বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মুসলিম জনপদ বাংলাদেশের মানুষ ১৭৫৭ সালে দখলদার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক হানাদারদের কাছে পরাধীনতা বরণ করে। এরপর ১৯০ বছর নির্যাতন-নিপীড়ন-ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষসহ জাতিগত নিধন অভিযানের শিকার হয়। দখলদার ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্থানীয় হিন্দুরা মুসলমানদের জমি-জীবন-সম্ভ্রম কেড়ে নেয়।
আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ব্রিটিশের দখলদারি ও হিন্দু সাম্প্রদায়িকদের বিরুদ্ধে মুসলমানেরা ও নিম্নবর্ণের হিন্দুরা একের পর এক লড়াই করার পর ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট উপনিবেশমুক্ত স্বাধীন রিপাবলিক পাকিস্তান অর্জিত হয়। এ রিপাবলিকের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন পাকিস্তানের সংবিধান হবে মানবতার মুক্তির বার্তাবাহী পবিত্র কুরআন। কিন্তু তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করলে রিপাবলিক স্বৈরশাসন ও রাজনৈতিক বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। এর অনিবার্য পরিণতিতে ১৯৭১ সালে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে জড়িয়ে পাকিস্তান ভেঙে দুই ভাগ হয়ে যায়। এই সুযোগে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র ভারত আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর বারবার হস্তক্ষেপ করে এ দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করেছে।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আরও বলেন, ভারত তার একান্ত তাবেদার আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে বারবার বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন চাপিয়ে দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনা পাপাচারী স্বৈরাচারী দুঃশাসন চাপিয়ে দেন। এ সময় পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাসাকার, শাপলা চত্বরে গণহত্যা, ভারতবিরোধী নেতাদের ফাঁসি, তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার হরণ ও সর্বশেষ জুলাই গণহত্যা ঘটিয়ে দুই হাজার ছাত্রজনতাকে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, জুলাই গণহত্যা ঘটিয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালের মানচিত্রের ওপর থেকে ভারতীয় প্রভাবের অবসান ঘটেছে। এরপর বাংলাদেশকে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের চাপিয়ে দেওয়া বাহাত্তরের ইসলাম ও গণবিরোধী সংবিধান বাতিল করেনি। এ অবস্থায় রিপাবলিক পুনর্গঠন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলা করতেই মুসলিম জাতীয়তাবাদী ছাত্র সংগঠন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
আবদুল ওয়াহেদ বলেন, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ চব্বিশ ও একাত্তরকে ধারণ করে ১৯৪৭ সালের রিপাবলিকের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করবে। কুরআন-সুন্নাহ-বিজ্ঞান ভিত্তিক রিপাবলিকের মাধ্যমে আমরা হারিয়ে যাওয়া বাংলা সালতানাত পুনঃপ্রতিষ্ঠার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ। এর অংশ হিসেবে আমরা দ্রুত ফ্যাসিবাদমুক্ত নির্বাচন, নতুন সংবিধান ও বিজ্ঞানভিত্তিক ইসলামী শিক্ষানীতির দাবি জানাই।
মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া শাখার আহ্বায়ক রাকিব মন্ডল, সদস্য সচিব মো. জিনাত হোসেন, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব শরীফ খান প্রমুখ।
চব্বিশের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনা রেজিমের পতনের পর রাষ্ট্রকে নতুন করে রিপাবলিক হিসেবে গঠন না করে বাহাত্তরের সংবিধানের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিরোধিতা করে ২৫ আগস্ট নতুন রাজনৈতিক লড়াইয়ের ঘোষণা দেন ফ্যাসিবাদবিরোধী নাগরিকরা।
ওই আহ্বানে সাড়া দিয়ে জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী আদর্শের ভিত্তিতে ‘বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ’ গঠন করে। ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে।
এরপর সংগঠনটি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ও দলটিকে পুনর্বাসনে বিএনপি-জামায়াতের আঁতাতের বিরুদ্ধে একের পর এক কর্মসূচি পালন করে।
এছাড়া সংগঠনটির সামাজিক-রাজনৈতিক প্রচারণা ও কর্মসূচির ফলে বাংলা সভ্যতার সোনালি অধ্যায় ‘বাংলা সালতানাত’, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রথম স্বাধীনতা অর্জন, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের মদদে বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী সাম্প্রদায়িকতা, হিজাব ও ইসলামী শরীয়া বিদ্বেষ, হিন্দু সাম্প্রদায়িকদের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ নজির আহমেদ হত্যা, বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসন, মুসলমানদের হত্যাযোগ্য করার জঙ্গিবাদী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জেন জি ও জেন আলফা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে শক্তিশালী ন্যারেটিভ তৈরি হয়েছে।
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যে টানা ৩৬ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল আন্দোলন করে সাফল্য পেয়েছে।