দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘ট্রানজিশনাল পিরিয়ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, নির্বাচন সামনে হলেও এটি কোনো শেষ লক্ষ্য নয়; বরং দেশকে গণতন্ত্রে ফেরানো এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি ও ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন এক ধরনের দোলাচলে আছি। নির্বাচনের সময় ঘোষণা হয়েছে, শিডিউল হওয়ার কথা। কিন্তু নির্বাচনই সবকিছু নয়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া এবং ডেমোক্রেটিক কালচার প্রতিষ্ঠাই সবচেয়ে জরুরি।’

তিনি মনে করেন, টেকসই রাষ্ট্র গড়তে হলে বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, সংসদ ও প্রশাসনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী হতে হবে। পাশাপাশি গত ১৬ বছরে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর দমন–পীড়ন, গুম–খুন ও মিথ্যা মামলার ঘটনাগুলো দলিলভিত্তিকভাবে ইতিহাসে তুলে ধরার তাগিদ দেন তিনি।

সংস্কার নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক প্রসঙ্গে বিএনপির দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে সংস্কারের কথা বলা হয়, কিন্তু আমরা বরাবরই সংস্কারের দাবি তুলেছি। একে ব্যক্তিগত অর্জন হিসেবে দেখানো সংকীর্ণতা।’

বিএনপি বিপ্লবী নয়, লিবারেল ডেমোক্র্যাট দল—এ কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সব ধর্ম–বর্ণ–মতের মানুষকে নিয়ে আমরা রেইনবো স্টেট গড়তে চাই। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার—উই আর লিবারেল ডেমোক্র্যাটস।’

শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রায়ের গুরুত্ব কমিয়ে দিতে কোনো মহল সচেতনভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। একই সঙ্গে মবক্রেসি–সহিংসতার ঘটনাগুলোকেও তিনি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন।

গণতন্ত্রের চর্চার অভাবকে দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সংকটের প্রধান কারণ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের মূল কথা—আমি তোমার সঙ্গে একমত নাও হতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব। দুর্ভাগ্য যে এখানে অনেকেই ভিন্ন মত মেনে নিতে চান না।’

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অবস্থানও বক্তৃতায় তুলে ধরেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য দেন সেলিমা রহমান, সাইফুল হক, বি এম নাগিব হোসেন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুল মোনায়েম মুন্না, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও বইয়ের সম্পাদক বাবুল তালুকদার। অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিনসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা।