জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়ন সম্পন্নের জন্য আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ শিরোনামে এই আদেশ বৃহস্পতিবার গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

গেজেট অনুযায়ী, জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত সংবিধান সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই সনদের প্রধান চার বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট নেওয়া হবে। ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়ী হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা হবে, যা সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদ প্রথম অধিবেশনের তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে—অর্থাৎ ছয় মাসের মধ্যে—সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করবে। সংস্কার শেষে পরিষদের কার্যক্রম শেষ হবে।

পরিষদের কার্যপ্রণালী

পরিষদ নিজেই অধিবেশন আহ্বান ও মুলতবি করতে পারবে। সংবিধান সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন, বিবেচনা ও গৃহীত হওয়া পর্যন্ত সব কার্যক্রম নির্ধারণের এখতিয়ার পরিষদ সদস্যদের হাতে থাকবে। জাতীয় সংসদ সচিবালয় পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবে।

পরিষদের কাঠামো

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যেদিন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন, সেদিন একই অনুষ্ঠানে পরিষদ সদস্য হিসেবেও শপথ নেবেন। সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ করাবেন যিনি, তিনিই পরিষদ সদস্যদের শপথও পাঠ করাবেন।

পরিষদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে সদস্যরা একজন সভাপতি ও একজন উপসভাপতি নির্বাচন করবেন। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত পরিষদের প্রবীণতম সদস্য সবার সম্মতিক্রমে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। সভাপতি ও উপসভাপতি অনুপস্থিত থাকলে কার্যপ্রণালী অনুযায়ী যেকোনো সদস্য সভাপতির দায়িত্ব নিতে পারবেন।

যেভাবে সংসদ নির্বাচনের ফল ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে প্রথম সংসদ অধিবেশন আহ্বান করা হয়, ঠিক সেভাবেই পরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করা হবে। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ন্যূনতম ৬০ জন সদস্যের উপস্থিতি প্রয়োজন হবে।

পরিষদের সিদ্ধান্তে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। কোনো প্রস্তাবে ভোট সমান হলে সভাপতির ভোট নির্ণায়ক হবে। পরিষদের কাজের বৈধতা, বিশেষ অধিকার ও দায়মুক্তি জাতীয় সংসদ সদস্যদের মতোই থাকবে বলে গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিষদ জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুযায়ী সংবিধানে সংশ্লিষ্ট সনদ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করবে।

উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা

রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী, সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার এক মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে একটি উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে এবং এর কর্মপরিধি নির্ধারণ করা হবে।

উচ্চকক্ষের মেয়াদ হবে—শপথ গ্রহণের দিন থেকে নিম্নকক্ষের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের প্রয়োজন নেই। উচ্চকক্ষ গঠনে কোনো জটিলতা দেখা দিলে সরকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবে, এবং পরিষদ এর বিধি প্রণয়ন করবে।

সংবিধান সংস্কার পরিষদের প্রণীত সংবিধানই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এর জন্য আলাদা কোনো অনুমোদন বা সম্মতির প্রয়োজন হবে না। সংস্কার শেষে রাষ্ট্রপতি সংশোধিত সংবিধান সরকারি গেজেটে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন।