জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাদের কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে আলোচনা। মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়ের পোস্টগুলোকে ঘিরে অনেকে বলছেন, এতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে দলের ভেতরের একাংশ কিংবা জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার সহযোদ্ধাদের দিকে।

গতকাল সোমবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘বন্ধু, তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন আর পতাকা একটা সিটের বিনিময়ে বিক্রি করে দিও না।’ এক বাক্যের এই পোস্টের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা।

এর পরদিন সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের নিজের ফেসবুকে লেখেন, ‘একটা দলের নেতারা দিনের বেলায় হাঁকডাক ছাড়ে, দিনভর বিএনপিকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে; আর রাতের বেলায় বিএনপির নেতাদের বাসায় গিয়ে ধরনা দেয়!’ তিনি দাবি করেন, ওই দলের তথাকথিত ‘আপসহীন নেতা’ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ এক ইমাম গত পনেরো দিনে বিশটি আসনের জন্য বিএনপি নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে থাকা নেতাদের উদ্দেশ করেই এসব পোস্ট—এমন ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এক লাইনে থেমে গেলেও আবদুল কাদের দীর্ঘ ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘আসন সমঝোতায় বেটার নেগোসিয়েশনের কৌশল হিসেবে এমন উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিচ্ছেন ওই তথাকথিত আপসহীন নেতা। পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলা তরুণদের কাছে আসবে, তরুণ থাকবে ড্রাইভিং সিটে—এই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু খোদ ইমামরা গিয়ে বসে থাকেন বিশটা সিটের জন্য!’

এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এনসিপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায় রাতে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে ট্যাগ করে লিখেছেন, ‘প্রতিপক্ষের নাম সরাসরি বলতে দ্বিধা নেই, কিন্তু ইশারায় বোঝানো বন্ধুর নাম বলেননি। নাসিরের এক স্ট্যাটাসেই ঘরের বন্ধু আর বাহিরের বন্ধু সবাই চাপে।’ পরের দিন সকালে অনিক রায় আবদুল কাদেরের পোস্ট শেয়ার করে লেখেন, ‘তাহলে কি দিনে বিপ্লব আর রাতে নেগোসিয়েশন?’

ফেসবুকে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, নাসীরুদ্দীনের পোস্টটি আসলে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে উদ্দেশ করে লেখা।

আসিফ মাহমুদ গত রোববার ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হওয়ার আবেদন করেন। তিনি বলেন, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এবং সম্ভবত ঢাকা থেকেই লড়বেন। তবে এনসিপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।

বিএনপির সঙ্গে এনসিপির আসন ভাগাভাগি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা থাকলেও এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) চাঁদপুরে দলের এক সভায় বলেন, ‘চাঁদাবাজি, মামলা-বাণিজ্য আর ত্রাসের রাজনীতি যারা কায়েম করেছে, তাদের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনের চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।’

জোট রাজনীতি ও আসন সমঝোতার আলোচনার এই সময়ে এনসিপি নেতাদের ফেসবুক পোস্ট রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।