জাতীয় দলে খেলার সময় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম। তার অভিযোগের তীর নারী দলের সাবেক নির্বাচক ও ম্যানেজার, সাবেক জাতীয় পেসার মঞ্জুরুল ইসলাম এবং বিসিবির নারী বিভাগের সাবেক ইনচার্জ প্রয়াত তৌহিদ মাহমুদের দিকে। এছাড়াও অভিযোগ তুলেছেন তিনি সংশ্লিষ্ট আরও কজনের বিরুদ্ধে।
জাহানারা দাবি করেছেন, এসব বিষয়ে বিসিবিতে বিস্তারিত জানিয়েও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছে বোর্ড।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের পথিকৃৎদের একজন জাহানারা। দেশের হয়ে খেলেছেন ৫২ ওয়ানডে ও ৮৩ টি-টোয়েন্টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের সফলতম নারী পেসার তিনি। জাতীয় দলের নেতৃত্বও দিয়েছেন। বিদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা বাংলাদেশের একমাত্র নারী ক্রিকেটারও তিনি। ৩২ বছর বয়সী এই পেসার বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ক্লাব ক্রিকেট ও কোচিং কোর্সে যুক্ত আছেন।
ফ্রিল্যান্স ক্রীড়া সাংবাদিক রিয়াসাদ আজিমের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাহানারা অভিযোগ করেন, ২০২২ সালের নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ চলাকালে মঞ্জুরুল ইসলাম তাকে কুপ্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নানা সময় অপমান, মানসিক নির্যাতন ও বাজে আচরণের শিকারও হন বলে জানান তিনি। একই ধরনের অভিযোগ করেন নারী ক্রিকেটের সাবেক ইনচার্জ তৌহিদ মাহমুদের বিরুদ্ধেও।
জাহানারা বলেন, তিনি এসব বিষয়ে নারী বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল ইসলাম চৌধুরীকে কয়েক দফা জানালেও কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীকে লিখিতভাবে জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এছাড়া আরও কিছু ক্রিকেটারও একই ধরনের হয়রানির শিকার হলেও ভয় বা শঙ্কায় মুখ খুলছেন না বলে মন্তব্য করেন জাহানারা।
এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিবৃতি দিয়ে বিসিবি জানায়, ‘স্পর্শকাতর’ অভিযোগগুলোর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ জমা দেবে।
বিবৃতিতে বিসিবি জানায়, নারী ক্রিকেটারসহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্য নিরাপদ, সম্মানজনক ও পেশাদার পরিবেশ নিশ্চিত করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
এর আগে দৈনিক কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাহানারা দলের ভেতরকার পরিবেশ, সিন্ডিকেট, অধিনায়ক নিগার সুলতানার আচরণ ও ড্রেসিংরুমে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি নিয়েও নানা অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে বিসিবি সেই অভিযোগগুলো ‘ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও সত্যবিবর্জিত’ বলে উড়িয়ে দেয়।
বিসিবির নারী বিভাগের নতুন প্রধান আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-কে বলেন, ‘বাইরের মানুষ’ জাহানারার কথাকে তারা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
পূর্বের পোস্ট :