জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের নৈশভোজে শ্রম আইন, শ্রমিকের অধিকার ও চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন কূটনীতিক, জাতিসংঘ কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।

বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

রাজনৈতিক নেতাদের অভিন্ন মত

বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা আলোচনায় অংশ নিয়ে শ্রম খাত সংস্কার অব্যাহত রাখার প্রতি ঐকমত্য প্রকাশ করেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পোশাক শিল্পকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘প্রধান স্তম্ভ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে যে-ই সরকারে আসুক, এ খাতের প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতেই হবে।

জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, তাঁদের দলের অনেক নেতার পোশাক শিল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি সরকারের সংস্কার পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়ে তা ভবিষ্যতেও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবীর বলেন, বর্তমান সংস্কার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ডা. তাসনিম জারা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় মেডিকেল শিক্ষার্থী হিসেবে আহতদের সেবা দিয়েছিলেন তিনি। সেই ঘটনার প্রভাবেই তাঁর রাজনৈতিক চিন্তার বিকাশ হয়। তিনি শ্রম নিরাপত্তার মানবিক দিক ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

শ্রম সংস্কারের গুরুত্ব

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বৃহৎ পরিসরে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য শ্রম সংস্কার অপরিহার্য। তিনি ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আইএলও মহাপরিচালক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা শ্রম খাত সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নয়নের সম্ভাবনা তুলে ধরেন।

ন্যায্য মূল্যের দাবি

আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে অভিন্নভাবে উঠে আসে পোশাক রপ্তানিতে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবি। তাঁদের মতে, সব সময় ক্রেতাদের শর্তে নয়, বরং ন্যায্যতার ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হওয়া উচিত। এ বিষয়ে সর্বদলীয় সমর্থন দেখা যায়।

সরকারের প্রতিশ্রুতি

সমাপনী বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা শ্রম খাত সংস্কারকে অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন এবং শ্রমিকের কল্যাণে ‘অপরিহার্য’ আখ্যা দিয়ে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।