রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত জাতীয় সনদের দ্রুত বাস্তবায়ন আশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
শুক্রবার বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আমাদের যে চেষ্টা, সকলের যে চেষ্টা, তা একদিনে সাফল্য অর্জন করবে না। একটি দলিল কেবলমাত্র সেটা নিশ্চয়তা দিতে পারে না। তবে আমরা আশা করি, এই জাতীয় দলিলের বাস্তবায়ন দ্রুততার সঙ্গে ঘটবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এই দিক নির্দেশক দলিল ভবিষ্যতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পরিচালনা করবে। তবে আমাদের সামনে এখনও অনেক পথ বাকি।’
আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবেই, না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। মত ও পথের পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বহু স্রোত যেন মোহনায় এসে মেলে—যাতে আমরা বলতে পারি, আমাদের গন্তব্য একটিই, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলে এক জায়গায়—স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর জন্যই আজকের এই দিনটি ঐতিহাসিক। এটি আমাদের দীর্ঘ রাষ্ট্র সংস্কারের যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ।’
দীর্ঘ এক বছরের আলোচনা শেষে রাষ্ট্র সংস্কারের অঙ্গীকার সম্বলিত ‘জুলাই সনদ’ শুক্রবার বিকেল ৫টায় স্বাক্ষরিত হয়।
এর আগে আলী রীয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অনন্য সময় এটি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল, তা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে গণতন্ত্র ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের নাগরিকদের লড়াই কখনও থেমে থাকেনি—১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থান তার প্রমাণ।’
তিনি বলেন, ‘এই ধারাবাহিকতা, এই সাহস, এই প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা এই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করছি। এটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি দিকনির্দেশনা।’
কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চুক্তি নয়; এটি নাগরিক, রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের মধ্যে এক সামাজিক চুক্তি। এর প্রতিটি অংশে বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রাম, কষ্ট ও প্রচেষ্টার প্রতিফলন রয়েছে।’
আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন কিংবা আজও কষ্টে আছেন—তাঁদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়েই এই সনদ তৈরি হয়েছে।’
তিনি শেষ করেন এই প্রত্যাশা দিয়ে—‘যে রাষ্ট্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, সেই রাষ্ট্র নির্মাণে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ। আমি-আপনি-তুমি-সে—এইভাবে আমরা বিভক্ত নই। এই প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ও পথচলা অব্যাহত থাকবে; এটাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রত্যাশা, এটাই আমাদের সকলের।’
পূর্বের পোস্ট :