তালেবান-শাসিত আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানির পর দেশটির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ত্রাণ সহায়তা জোরদার করছে ভারত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি কেবল মানবিক উদ্যোগ নয়—চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় আফগানিস্তানে ভারতের ভূরাজনৈতিক উপস্থিতি জোরদারের কৌশলও বটে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, সোমবার আকাশপথে ২১ টন ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে আফগানিস্তানে। এর মধ্যে রয়েছে ১৫ টন খাবার, কম্বল, তাঁবু, হাইজিন কিট, জেনারেটর, পানি শোধনের ছোট যন্ত্র, ওষুধপত্র, হুইলচেয়ার ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রী। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের সার্বিক পরিস্থিতি ভারত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে আরও সহায়তা পাঠানো হবে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল উত্তরাঞ্চলের বলখ প্রদেশে, মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৩। এতে অন্তত ২০ জন নিহত এবং ৯০০’র বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। শত শত বাড়িঘর ধসে গেছে। বলখ ও সামাংগান প্রদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ঐতিহাসিক নীল মসজিদও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঙ্গি তাশকুরগান এলাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘দোকানগুলোর ভেতরে ঢুকলে ভয় লাগে। যেকোনো মুহূর্তে তা ধসে পড়তে পারে।’

চীনের পক্ষ থেকেও আফগানিস্তানকে সহায়তার ঘোষণা এসেছে। তবে নয়াদিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফরেইন পলিসি স্টাডিজের প্রধান হার্শ প্যান্ট মনে করেন, আফগানিস্তানে ভারত দ্রুত সাড়া দিয়ে নিজেকে ‘দায়িত্বশীল আঞ্চলিক শক্তি’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। তাঁর ভাষায়, ‘ভারতের এই তৎপরতা কেবল মানবিক নয়, বরং স্থানীয় জনগণের কাছে ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ার অংশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তান থেকে সরে যাওয়ার পর সৃষ্ট শূন্যতা ভারত পূরণ করতে না পারলে, সেই স্থানটি চীন দখল করবে। তাই নয়াদিল্লি এখন থেকে কৌশলগতভাবে সক্রিয় হচ্ছে।’

গত মাসে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ভারত। কাবুলে দূতাবাস পুনরায় চালু, পানি ও বিদ্যুৎ প্রকল্পে সহযোগিতা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তারও ঘোষণা দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের এক কর্মকর্তা বলেছেন, কাবুলে দূতাবাস খোলার সিদ্ধান্ত ‘রাজনৈতিক বার্তা’ বহন করে—এটি তালেবানকে স্বীকৃতি না দিলেও আফগানিস্তানে ভারতের উপস্থিতি জোরদারের পদক্ষেপ।

ভূমিকম্পপ্রবণ আফগানিস্তানে প্রায়ই বড় দুর্যোগ ঘটে। দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে শত শত বাড়ি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধসে পড়েছে। এ অঞ্চলের অধিকাংশ ঘর কাদামাটি ও কাঠ দিয়ে তৈরি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ে এবং প্রাণহানিও বেশি হয়। বিশেষজ্ঞরা পুরনো ভবন মজবুত করা ও নতুন ভবন শক্ত কাঠামোতে নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছেন।