জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি আজ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে সনদে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কোনো সুপারিশ থাকছে না। এই সুপারিশ পরে অন্তর্বর্তী সরকার ও দলগুলোর কাছে দেওয়া হবে, যা জুলাই সনদের অংশ হিসেবে গণ্য হবে না।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। প্রথম ধাপে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের (সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন) প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে ঐকমত্য কমিশন। ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত দুই পর্বে ৬৩টি দলের সঙ্গে আলোচনায় ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছায় কমিশন। এই প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতেই তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ।
সনদের তিনটি ভাগ রয়েছে—প্রথম ভাগে পটভূমি, দ্বিতীয় ভাগে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এবং তৃতীয় ভাগে রয়েছে বাস্তবায়নের সাত দফা অঙ্গীকারনামা।
আগামী শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। ইতিমধ্যে অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আয়োজনে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে। প্রায় তিন হাজার অতিথিকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
সনদে সইয়ের জন্য ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আগেই কমিশন দলগুলোর কাছ থেকে দুজন করে স্বাক্ষরকারীর নাম চেয়েছিল। ইতিমধ্যে সব দলই নাম পাঠিয়েছে, তবে শেষ পর্যন্ত সবাই সই করবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সনদের বিষয়ে আর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে না। গত ১১ সেপ্টেম্বর পাঠানো খসড়াটিই মূলত চূড়ান্ত আকারে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে মূল বিষয়বস্তু অপরিবর্তিত থাকছে, কেবল কিছু ভাষাগত সংশোধন করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি প্রদর্শন সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪(ক) বিলুপ্তির বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। প্রায় সব দলই এর পক্ষে মত দেয়, তবে সনদে এটি নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে।
গত জুলাই মাসে সনদ স্বাক্ষরের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল কমিশন। তবে বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়। পরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে কমিশন। ৯ অক্টোবর আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়, কিন্তু গণভোটের সময়, পদ্ধতি ও প্রশ্নবস্তুকে ঘিরে কয়েকটি দলের মধ্যে মতভিন্নতা রয়ে গেছে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের অনুলিপি পাঠানো হবে। শুক্রবার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। এর মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ দেওয়া সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।’
পূর্বের পোস্ট :