রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুভূত শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিন জেলায় শিশুসহ অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। দেয়াল ধস, ভবনে ফাটল ও হুড়োহুড়ি করে বেরোতে গিয়ে এসব মৃত্যু ও আহতের ঘটনা ঘটে।
রূপগঞ্জে দেয়াল ধসে মারা গেছে ১০ মাসের ফাতেমা। মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় ধসে পড়া দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে শিশুটি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। গুরুতর আহত হয়েছেন তার মা কুলসুম বেগম (৩০) এবং প্রতিবেশী জেসমিন আক্তার (৩৫)। ধসে পড়া ইট সরিয়ে ফাতেমার নিথর দেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এ সময় কুলসুম ছিলেন অচেতন অবস্থায়।
বিকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় ফাতেমাকে। বাবা-মা কেউই উপস্থিত থাকতে পারেননি। গুরুতর আহত কুলসুমকে চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটছেন আব্দুল হক। তিনটি হাসপাতালে শয্যা না থাকায় ভর্তি নিতে অপারগতা জানানো হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে এখন তাকে আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেসে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
ফাতেমার খালু মোহাম্মদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে ব্যান্ডেজ করে বলে সিট নাই। এমন অবস্থায় বাড়ি নিয়ে যেতে বললে আমরা কোথায় যাই? আমরা গরিব মানুষ, চিকিৎসা পাই না।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জানান, ধসে পড়া দেয়ালটিতে কোনো রড-পিলার ছিল না। প্রায় ১০ ফুট উঁচু দেয়ালটি অস্বাভাবিকভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। তিনি জানান, এলাকায় নিয়ম না মেনে নির্মিত এমন ঝুঁকিপূর্ণ দেয়াল ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। নিহত পরিবারের জন্য ২০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জের আঁটি হাউজিং এলাকায় তিনটি ভবন হেলে পড়েছে; কয়েকটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। হিরাঝিল আবাসিক এলাকা, আল ইসলাম নগর, রনি সিটির কয়েকটি ভবনেও ফাটলের খবর মিলেছে। সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভবনেও বড় ফাটল দেখা গেছে। তবে এসব স্থানে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বিভিন্ন এলাকায় হেলে পড়া ভবন এবং ফাটল নিয়ে প্রশাসন কাজ করছে। ভবনের নিরাপত্তা পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই ভূমিকম্পে ঢাকাসহ দেশের তিন জেলায় প্রাণ গেছে শিশুসহ অন্তত ১০ জনের; আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ।
পূর্বের পোস্ট :