নতুন শিক্ষাবর্ষে দেশের ৪ হাজার ৪৫টি সরকারি–বেসরকারি স্কুল কেন্দ্রীয়ভাবে লটারির মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।

সারাদেশের ৬৮৬টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল এবং মহানগর ও জেলা–উপজেলা সদরের ৩ হাজার ৩৫৯টি বেসরকারি স্কুল এবার লটারির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে যাচ্ছে।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য ফাঁকা রয়েছে ১১ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি আসন।

দেশের সব সরকারি স্কুল এবং মহানগর ও জেলা–উপজেলা সদরের বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন শুরু হচ্ছে শুক্রবার থেকে।

যদিও মহানগর ও জেলা–উপজেলা সদরের সব বেসরকারি স্কুল কেন্দ্রীয় লটারিতে অংশ নেবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি। এ তালিকায় খোদ শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে চলা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

গত কয়েক বছরের মতো এবারও ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্কুলে ভর্তিতে কেন্দ্রীয় লটারি প্রক্রিয়ার আওতায় আসবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ঢাকা মহানগর ভর্তি কমিটি কেন্দ্রীয় লটারির আয়োজন করছে। ডিজিটাল পদ্ধতির এ লটারি প্রক্রিয়ায় সার্বিক সহযোগিতা করছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটক।

সরকারিতে সোয়া লাখ ও বেসরকারিতে সাড়ে ১০ লাখ আসন

ভর্তি কমিটির সদস্য–সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার উপপরিচালক ইউনুস ফারুকী বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সারাদেশে ৬৮৬টি সরকারি স্কুলে ১ লাখ ২০ হাজার ২৫৮টি আসন এবং ৩ হাজার ৩৫৯টি বেসরকারি স্কুলের ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮১১টি আসনের তথ্য প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির কেন্দ্রীয় লটারিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করে এসব আসনে ভর্তি করা হবে।

শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ৫ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তির আবেদন করতে পারবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে লটারিতে ভর্তির আবেদন গ্রহণের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলো প্রধান শিক্ষকরা ১২ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত শূন্য আসনের তথ্য দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।

শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে চলা প্রতিষ্ঠান এখনও কেন্দ্রীয় লটারির বাইরে

শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতে এবং কোচিং–বাণিজ্য ঠেকাতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির পরিকল্পনা করেছিল। ২০২০ সালে মহামারির মধ্যে প্রথমবার স্কুলে ভর্তির জন্য সরকার লটারি পদ্ধতি চালু করে। এরপর থেকে প্রতি বছরই এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশে সব সরকারি এবং মহানগর ও জেলা–উপজেলা পর্যায়ের সব স্কুলে কেন্দ্রীয় লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা দেওয়া হলেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনের নেতৃত্বে চলা ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ এখনো লটারির মাধ্যমে স্কুল শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বা শিক্ষা সচিব পদাধিকার বলে এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

জানতে চাইলে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের দিবা শাখার সিনিয়র ভাইস প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এবার ডিআরএমসিতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

এবার প্রতিষ্ঠানটি তৃতীয়, চতুর্থ ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির পরিকল্পনা করছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান রেহানা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

শুক্রবার সকাল থেকে আবেদন, লটারি হতে পারে ১৪ ডিসেম্বর

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জারি করা সরকারি–বেসরকারি স্কুলের আলাদা ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে ৫ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তির আবেদন করতে পারবে। অনলাইনে gsa.teletalk.com.bd ওয়েবসাইট থেকে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে ভর্তির আবেদন করা যাবে।

ভর্তির আবেদন করতে শিক্ষার্থীদের ১০০ টাকা ফি দিতে হবে। গতবার অনলাইনে আবেদন ফি ছিল ১১০ টাকা, এবার তা ১০ টাকা কমানো হয়েছে।

গত ১০ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে আয়োজিত ঢাকা মহানগরীর ভর্তি কমিটির সভায় ভর্তির আবেদন গ্রহণ ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য এবং অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল।

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় লটারি আয়োজনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ ডিসেম্বর। সবকিছু ঠিক থাকলে সেদিন লটারি হবে।’

ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা ১৭ থেকে ২১ ডিসেম্বর ভর্তি হতে পারবে। এবারও ভর্তির ক্ষেত্রে গতবারের মতো দুটি অপেক্ষমান তালিকা থাকবে।

২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর প্রথম ওয়েটিং লিস্ট এবং ২৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ওয়েটিং লিস্ট থেকে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে।

সব সরকারি এবং মহানগর ও জেলা–উপজেলা সদরের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা আবেদন করতে হবে।

ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১০০ টাকা ফির বিনিময়ে অনলাইনে আবেদনে তারা পাঁচটি স্কুল পছন্দক্রম দিতে পারবে। ডাবল শিফট স্কুলে উভয় শিফট পছন্দ করলে দুটি পছন্দক্রম গণ্য হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, এসব স্কুলের প্রতি শ্রেণি–শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা হবে ৫৫ জন।

প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি–২০১০ অনুসারে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীর সর্বনিম্ন বয়স ৫ বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স ৭ বছর হতে হবে। এ জন্য অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের প্রত্যয়িত কপি জমা দিতে হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের অতিরিক্ত সুবিধার কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে।

ঢাকা মহানগরীর সরকারি–বেসরকারি স্কুলের মোট শূন্য আসনের ৪০ শতাংশ সংলগ্ন ক্যাচমেন্ট এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে মহানগরের বাইরে এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে না।

সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের ৫ শতাংশ আসন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। প্রার্থী না থাকলে এসব আসনে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য দুই ধরনের স্কুলেই ২ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে।

লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিতে কাছের বেসরকারি স্কুলের ১ শতাংশ আসন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিতে সরকারি স্কুলগুলো ষষ্ঠ শ্রেণির ১০ শতাংশ আসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে।