মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, পরিবারে পুরুষের সঙ্গে নারী জেলেদেরও কার্ড থাকতে হবে; শিগগিরই নারীদের জেলে কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, “সরকারের দেওয়া জেলে কার্ডে পুরুষ জেলেদের নামই আসে, মাত্র ৪ শতাংশ সেখানে নারী। পরিবারে একজন চাকরি করলে তিনিই চাকরিজীবী হন, কিন্তু যারা মাছ ধরে তাদের পুরো পরিবার এ কাজে যুক্ত থাকে। এ প্রক্রিয়ায় বেশির ভাগ সময় নারীদের বেশি কাজ করতে হয়।”

উপদেষ্টা বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) আয়োজিত ‘টেকসই মৎস্যব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় নীতি সংলাপ’ শীর্ষক সেমিনারে বলেন, এখনো নারীদের কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। নারী জেলেদের কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ নারী জেলেরা পরিবার-পরিজনের জন্য নদীতে মাছ ধরে, স্বামীর অনুপস্থিতিতে সংসার চালায়।

তিনি আরও বলেন, “সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়-তুফানে অনেক জেলে মারা যায়, কেউ হারিয়ে যায়। সেসব পুরুষের হদিস না থাকায় তাঁদের স্ত্রীরা ব্যাংকের টাকা তুলতে পারে না। তা ছাড়া নারীকে বিধবা ভাতাও দেওয়া যায় না। এসব আইনি জটিলতা দূর করতে হবে।”

ফরিদা আখতার জানান, দেশের আইনগুলো পুরুষদের কথা চিন্তা করে করা হয়েছে, সেখানে নারীদের স্থান খুব কম। মৎস্য আইনও একই ধরনের। তবে মৎস্য আইনের খসড়া ২০২৫–এ এসব সমস্যার সমাধানে দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে।

জেলেদের আগের তালিকা অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অমৎস্যজীবীরা মৎস্যজীবীর কার্ড নিয়েছে। এখন সেগুলো বাতিল করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আমরা চাই, যেন প্রকৃত জেলেরা কার্ড পেতে পারে। সেই সঙ্গে যে পরিবারে পুরুষ জেলের কার্ড থাকবে, সেখানে নারীদেরও থাকতে হবে, বলেন উপদেষ্টা।

মাছ ধরা নিষিদ্ধের সময়ে যতজনকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় সহযোগিতা দেওয়া দরকার, তা দেওয়া সম্ভব হয় না। এর পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম মজুরি পান। তা ছাড়া জলমহাল ইজারা রাজস্বভিত্তিক দেওয়া হয়। এটি বাতিল করে ‘জাল যার জলা তার’ নীতিতে নিতে হবে। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড নিশ্চিত করে জেলে কার্ড দেওয়া হবে।

ড. রউফ যোগ করেন, “বর্তমানে আমাদের নিবন্ধনে ১৭ লাখ জেলের মধ্যে ৪৪ হাজার নারী। এ সংখ্যা আমাদের বৃদ্ধি করতে হবে।”