চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়ায় যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিতে মো. সাজ্জাদ (২২) নামের এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ১০ জন। সোমবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে বাকলিয়া এক্সেস সড়কের বগার বিল মুখ এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ জানায়, ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত।

চট্টগ্রামে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষ এবং এতে অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা নতুন নয়। চলতি বছরের ২১ মার্চ নগরের খুলশী এলাকায় ব্যানার টাঙানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবদল কর্মী মো. জিহাদ মারা যান। সে ঘটনায় ছাত্রদলের সদস্যসচিব শরীফুল ইসলামের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপি নেতা শাহ আলমের অনুসারীদের বিরোধ সামনে আসে।

এ ছাড়া গত শনিবার জেলার রাউজানের চারাবটতল এলাকায় যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত আলমগীর উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী ছিলেন। অপর পক্ষ ছিল কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা।

কেবল রাউজানেই গত বছরের ৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ৭টি হয়েছে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিরোধে। এর মধ্যে ৬ জন গুলিতে নিহত হন।

এসব ঘটনায় দায়ীদের গ্রেপ্তার এবং অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্টের সহিংসতার সময় থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের কিছু এখনো সন্ত্রাসী ও দলীয় কর্মীদের হাতে রয়েছে। এসব অস্ত্র প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ বলেন, অস্ত্রধারীদের ধরতে অভিযান চলছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

নিহত সাজ্জাদ নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) এমদাদুল হক বাদশার অনুসারী। তিনি বাকলিয়া তক্তারপুল এলাকার মো. আলমের ছেলে।

দলীয় সূত্র জানায়, নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহর অনুসারী বোরহানউদ্দিন এবং এমদাদুল হকের অনুসারীদের মধ্যে বোরহানের ছবি দেওয়া ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। সোমবার রাতে এমদাদুলের অনুসারী জসিমকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়। খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাজ্জাদের মৃত্যু হয়।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে ঘটনা ঘটেছে। একজন নিহত হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

নিহতের মা ফরিদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে কেন গুলি করা হলো? আমি তার খুনিদের বিচার চাই।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করেন। নিহতের বাড়িতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশ কমিশনারকে বলেছি—এই ছেলেগুলোকে গ্রেপ্তার করতে হবে। যদি আমার দলের কেউ তাদের আশ্রয় দিয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নাও।’

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর সাজ্জাদের লাশ দাফন করা হয়। এলাকাবাসীর মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।