স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মানুষের প্রথম গণভোট হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এর পর ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালে আরও দুটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৪৮ বছর পর আবার গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। 

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সাংবিধানিক আদেশ জারি করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা তার আগে গণভোট করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’–এর খসড়া তুলে দেয় কমিশন।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘সরকার যেন অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসে গণভোট আয়োজনের তফসিল তৈরি করে ফেলে।’

রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরের প্রথমদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যেই গণভোট আয়োজনের কর্মপরিকল্পনা যুক্ত হতে পারে।

প্রথম গণভোট যেভাবে হয়েছিল

প্রথম গণভোট অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালের ৩০ মে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোট চলে। তখন ভোটার ছিলেন প্রায় পৌনে চার কোটি। ব্যয় হয়েছিল ২ কোটি ৫ লাখ টাকা। ফল ঘোষণা হতে সময় লাগে ৩০ ঘণ্টা। প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ৯৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ ছিল ‘হ্যাঁ’।

সেই গণভোটে প্রশ্ন ছিল—তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নীতি ও কাজের প্রতি আস্থা আছে কি না। গোপন ব্যালটে ভোটাররা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেন।

এবার গণভোটে কী প্রশ্ন থাকবে

ঐকমত্য কমিশনের খসড়া আদেশে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদে প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কার বিষয়টি গণভোটে তোলা হবে। ব্যালটে প্রশ্ন থাকবে—

‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং এর তফসিল-১ এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?’

ভোটাররা ব্যালটে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ চিহ্ন দিয়ে ব্যালট বাক্সে ফেলবেন। প্রয়োজনে গণভোটের জন্য আলাদা আইন প্রণয়ন করা হবে।

ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। আর যদি ‘না’ ভোট বেশি হয়, তাহলে প্রক্রিয়া সেখানেই থেমে যাবে।