আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নির্বাচনী প্রস্তুতি বিষয়ক সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে তিনি এই নির্দেশনা দেন। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্বাচনকেন্দ্রিক নিরাপত্তা, প্রশাসনিক প্রস্তুতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য প্রতিরোধের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।

পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠক শেষে প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনের আগে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ—এসব বিষয়েই মূলত আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বানচালে ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তির কাছ থেকেও আক্রমণ আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড়ই আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’

আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য মোকাবিলা প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন—সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালানো হবে। এআই-নির্মিত ছবি ও ভিডিও দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হতে পারে। তাই যেকোনো অপপ্রচার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ঠেকাতে হবে, যেন ছড়াতে না পারে।’

মানুষকে ভোট ও নির্বাচনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে টিভিসি ও প্রামাণ্যচিত্র তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন।

নিরাপত্তা প্রস্তুতি

প্রেস সচিব জানান, নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর ৯২ হাজার ৫০০ সদস্য মোতায়েন থাকবে—এর মধ্যে সেনাবাহিনীর সদস্য ৯০ হাজার এবং বাকিরা নৌবাহিনীর। এছাড়া ভোটের ৭২ ঘণ্টা আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ প্রস্তুতি থাকবে।

মাঠ প্রশাসনের পদায়ন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা নিজ জেলা বা শ্বশুরবাড়ি এলাকায় পদায়ন পাবেন না। কোনো এলাকায় আত্মীয়-স্বজন নির্বাচনে প্রার্থী হলে সেখানেও তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হবে না।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ৬৪ জেলার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, ‘সবচেয়ে যোগ্য কর্মকর্তাদের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নিয়োগ দিতে হবে।’

প্রেস সচিব আরও জানান, গত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসি, এডিসি, ইউএনও ও ম্যাজিস্ট্রেটদের এবার নির্বাচন কার্যক্রমে যুক্ত না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া, নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, র‍্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, কোস্টগার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল জিয়াউল হকসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।