৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল সংসদ ও হোস্টেল সংসদের নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে ভোট দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি ভবন, নতুন কলা ভবন, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোট। এ নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ হাজার ৫১৬ জন শিক্ষার্থী ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত।
চাকসুর ২৬টি পদে প্রার্থী ৪১৫ জন; এর মধ্যে ভিপি পদে ২৪ এবং জিএস পদে ২২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পাশাপাশি ১৪টি হল ও একটি হোস্টেল সংসদের ২০৬ পদে প্রার্থী হয়েছেন ৪৯৩ জন।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল ও প্রার্থীরা
এবারের নির্বাচনে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে ১৩টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নিজস্ব প্যানেলে লড়লেও ইসলামী ছাত্রশিবির অংশ নিচ্ছে ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ নামে। বামপন্থি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল, ছাত্র ইউনিয়ন–ছাত্র ফ্রন্টের ‘দ্রোহ পর্ষদ’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’, ছাত্র অধিকার পরিষদের ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’সহ বিভিন্ন জোট অংশ নিচ্ছে নির্বাচনে।
চাকসুর ভিপি পদে একমাত্র নারী প্রার্থী চৌধুরী তাসনিম জাহান শ্রাবণ (বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য), আর জিএস পদে লড়ছেন আবির বিন জাবেদ।
প্রযুক্তিনির্ভর নতুন প্রজন্মের নির্বাচন
৩৫ বছর পর আয়োজিত এই চাকসু নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হচ্ছে ওএমআর ব্যালট ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স। ভোট গণনাও হবে ডিজিটাল স্ক্যানিং পদ্ধতিতে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক ভোটকেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, সব কেন্দ্রেই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পাঁচটি ভবনের প্রতিটি কক্ষের জন্য একজন সহকারী প্রক্টরের নেতৃত্বে ৬০ সদস্যের নিরাপত্তা দল মোতায়েন রয়েছে।
শেষবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষার্থীরা আবার পাচ্ছেন নিজের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ। এবারের নির্বাচনে প্রচার ছিল সম্পূর্ণ ব্যানার–পোস্টারমুক্ত, প্রার্থীরা প্রচারে নির্ভর করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সৃজনশীল উপস্থাপনার ওপর।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
শিক্ষার্থীদের মূল দাবি—আবাসন সংকট নিরসন, যাতায়াত সুবিধা, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, হলের নিয়ন্ত্রণমুক্ত পরিবেশ ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি। তারা চান, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ‘তথাকথিত নেতা’ নয়, বরং তাদের পাশে থেকে প্রকৃত নেতৃত্ব দেবেন।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আজিমুল সাকিব বলেন, ‘আমার জীবনের প্রথম ভোট এটি। সচেতনভাবে ভোট দিতে যাচ্ছি।’
চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী স্নেহা বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পেরে ভালো লাগছে।’
নিরাপত্তা ও চলাচলে নিয়ন্ত্রণ
ভোটকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রবেশের ৩৩টি পথের সাতটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহিরাগত কেউ যাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, এপিবিএন ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে শহরে বসবাস করায় ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। তবে প্রশাসন আশাবাদী, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী ভোট দিতে আসবেন।
ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী মো. শাফায়াত হোসেন বলেন, ‘প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে ভালো নির্বাচন হবে।’
অন্যদিকে শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি বলেন, ‘চমৎকার পরিবেশে প্রচার শেষ হয়েছে, ভালো ভোটের আশা করছি।’
৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত এই চাকসু নির্বাচন শুধু নেতৃত্ব বাছাই নয়—এটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রজন্মের গণতান্ত্রিক চর্চার সূচনা বলেই মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
পূর্বের পোস্ট :