চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪ বছর পর আবারও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে—এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে ইসলামী ছাত্রশিবির ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মধ্যে।

দীর্ঘ দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি এ দুই সংগঠন। কিন্তু ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হলে, নতুন বাস্তবতায় ক্যাম্পাসে ফের সক্রিয় হয় ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল।

আগামী বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে নির্ধারিত হবে সপ্তম চাকসু নির্বাচনের ফলাফল।

দুই প্রধান শক্তির লড়াই

ছাত্রশিবির এবার সরাসরি প্রার্থী না দিয়ে অংশ নিচ্ছে ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করছি। প্রচারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি।’

অন্যদিকে, সর্বশেষ নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্যানেল থেকে জয় পাওয়া ছাত্রদল এবার এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশে বিশ্বাসী। অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে বলে আশা করছি।’

ইতিহাস বলছে, শিবিরের শক্ত ঘাঁটি ক্যাম্পাসে

১৯৮১ সালের পঞ্চম চাকসু নির্বাচনে ভিপি ও জিএসসহ বেশিরভাগ পদে জয়ী হয়েছিল ছাত্রশিবির। এরপর ১৯৯০ সালের নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য বিজয়ী হলেও পরে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় শিবির।

২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১৫ সালের পর থেকে শিবির ও ছাত্রদল উভয়ের প্রকাশ্য কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমান প্রেক্ষাপট

এবারের নির্বাচনে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল ছাড়াও ইসলামপন্থি ও বামপন্থি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন অংশ নিচ্ছে। মোট ১৩টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৬ জন, এর মধ্যে ছাত্রী ভোট ১১ হাজার ৩২৯। চাকসু নির্বাচনে ৪১৫ জন প্রার্থী এবং ১৪টি হল ও একটি হোস্টেল নির্বাচনে মোট ৪৯৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

একজন সাবেক চাকসু নেতা মন্তব্য করেছেন, ‘ছাত্রদল যদি কয়েকটি বাম ও ইসলামী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জোট করত, তাহলে ফলাফল তাদের অনুকূলে আসতে পারত। এককভাবে শিবিরকে হারানো কঠিন।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন তাকিয়ে আছে—চার দশক পর ফের চালু হওয়া এই নির্বাচনে কোন পক্ষ জয়ী হয়, আর ক্যাম্পাস রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ কার হাতে ফিরে যায়।