জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া সাত দিনের সময়সীমা দ্রুতই শেষ হয়ে আসছে। কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

তবে গতকাল বুধবার এ বিষয়ে আলোচনার জন্য দুই সদস্যের কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির পক্ষ থেকেও আলোচনায় ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মতপার্থক্য কমাতে ছয়দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ নয়টি দল পৃথকভাবে দুই দলের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করেছে। পরে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গেও আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

এই নয় দলের মধ্যে একটি দলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা বলেন, তাঁদের চেষ্টা থাকবে গণভোটের সময়সূচি নিয়ে জামায়াতকে রাজি করানো এবং জুলাই সনদে ভিন্নমত কমিয়ে বিএনপিকে মাঝামাঝি অবস্থানে আনা।

জামায়াতে ইসলামী বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নির্বাচনী কাঠামো, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের বিষয়ে একটি ‘সমঝোতামূলক রূপরেখা’ তৈরির জন্য দুই সদস্যের কমিটি করেছে দলটি। তাঁরা হলেন নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। মঙ্গলবার দলের আমির শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর এ সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিএনপি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনায় সব সময়ই উদার। কথা বলার প্রয়োজন হলে অবশ্যই বলব।’

এর আগে গত সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদে উদ্বেগ প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার। সভা শেষে জানানো হয়, সরকার এ বিষয়ে কোনো আলোচনার আয়োজন করবে না। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা না দিলে সরকার তার মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে সরকার দায়িত্বহীন আচরণ করেছে। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার ভিত্তিতেই সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই নয় দলের পক্ষ থেকে আমরা সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছি। সব দলের সঙ্গেই আলোচনা হবে, তবে বিভ্রান্তি এড়াতে এখনই খোলামেলা কথা বলা হচ্ছে না।’

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকারি মধ্যস্থতা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগে সমঝোতা সম্ভব নয়। ঐকমত্য কমিশনের আট মাসের চেষ্টাতেও প্রধান দলগুলোকে একমতে আনা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে দলগুলো নিজ উদ্যোগে আলোচনায় সমঝোতায় পৌঁছাবে—এমন আশাও করছেন না অনেকে। তাঁদের মতে, শেষ পর্যন্ত হয় সরকারকে মধ্যস্থতায় আসতে হবে, না হয় নিজস্ব সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।