ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ ও ড্রোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সোমবার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়গুলো তুলে ধরে কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।

সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণিসহ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বিমানবাহিনীর প্রতিনিধি এয়ার ভাইস মার্শাল রুশাদ দিন আসাদ, নৌবাহিনীর প্রতিনিধি রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলীসহ সেনা, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইসি জানায়, আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রতিষ্ঠান বাছাইসহ বেশ কয়েকটি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করা হবে এবং রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনের তিনটি ধাপ—তফসিল ঘোষণার আগে, নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের পর—বিস্তারিতভাবে আলোচনায় আসে।

এআই–এর অপব্যবহার ঠেকাতে নির্দেশনা

ইসি বলেছে, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সহিংসতা উসকে দেওয়া ও ব্যক্তির মানহানি রোধে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ জরুরি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম হলেও অতীতে এটি নির্বাচনি সহিংসতা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই এআই–এর অপব্যবহার ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেবে কমিশন।

ড্রোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আসছে

ইসি বলছে, নির্বাচনের সময় ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়—গোপনীয়তা লঙ্ঘন, নিরাপত্তার ঝুঁকি, আইন লঙ্ঘন ও ভোটারের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির আশঙ্কা। ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনি এলাকায় ড্রোন উড্ডয়ন রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমন্বিত পরিকল্পনা

সভায় ভোটের আগে ও পরে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ১৩টি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে ইসি। এর মধ্যে রয়েছে—অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান, বহিরাগত অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নির্বাচনি অফিস ও কর্মকর্তাদের সুরক্ষা, পার্বত্য এলাকায় ভোটসামগ্রী পরিবহনে হেলিকপ্টার ব্যবহার এবং পোস্টাল ব্যালটের নিরাপত্তা।

ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি ও সহিংসতা রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা হবে।

সভায় আরও জানানো হয়, নির্বাচনকালীন সময়ে ভোটকেন্দ্র ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশ এবং প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনী ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। ভোট–পরবর্তী দুই দিন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল ও মোবাইল টিম হিসেবে মাঠে থাকবে।

ইসি আশা করছে, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।