স্নাতক ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যকার বর্তমান দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা শেষে এমন কথা জানিয়েছেন তিনি।
বৈঠকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ষাটজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পলিটেকনিক শিক্ষক ও বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা বৈঠকে অংশ নিয়েছেন ।
ফাওজুল কবির খান বলেন, স্নাতক ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পক্ষ থেকে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের একজন, স্নাতক ডিগ্রিধারী ইঞ্জিনিয়ারদের একজন শিক্ষক, আন্দোলনকারীদের একজন প্রতিনিধি, অন্যদিকে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের একজন, তাদের একজন শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের একজন প্রতিনিধি থাকবেন। তারা পরামর্শ দেবেন, আমরা কীভাবে দুপক্ষের মধ্যে একটি সেতু গড়তে পারি।
ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের তিন দফা দাবি, আর যারা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার তাদের সাত দফা দাবি। আজ আমরা ডিগ্রিধারী প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অভিভাবকদের সঙ্গে বসেছিলাম। আপনারা জানেন, খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলে আদালত এমিকাস কিউরির সহায়তা নেয় মতামত নেওয়ার জন্য। সেই ভূমিকায় আমরা তাদেরকে অ্যাফিলিয়েশন ভুলে বা ব্যাকগ্রাউন্ড ভুলে—অর্থাৎ আপনারা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার নাকি ডিগ্রিধারী ইঞ্জিনিয়ার সেটা ভুলে গিয়ে—আমাদের পরামর্শ দেবেন, আমরা কীভাবে বিষয়টিকে একটু সেতু গড়তে পারি। সেটাই হবে। এখানে সবাই এসেছিলেন, যোগ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপালরা এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে আমাদের একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় আমরা কয়েকটি সিদ্ধান্তে এসেছি। প্রথম আন্দোলনকারী দুপক্ষের দাবিগুলো হচ্ছে পরস্পরবিরোধী। তাদের একটি পক্ষের দাবি গ্রহণ করা হলে অন্যরা অসন্তুষ্ট হবেন—এমন। এ রকম একটি পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে সেতু গড়ে তোলা যায়, সেই অনুসারে কাজ করেছি। আমরা নিজেরা থেকে না, তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে আমরা ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
দুই পক্ষের মধ্যে একমত হওয়ার জন্য তারা কাজ করবেন। এটা হবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মতো। তারা নিজেরা সমাধান করলে সেটা হবে শ্রেষ্ঠ সমাধান। ওই কমিটির সুপারিশ না আসা পর্যন্ত তারা আর কোনো আন্দোলন করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জনদুর্ভোগ হয় এমন কাজে লিপ্ত হবেন না। কমিটির সুপারিশ এলে সেটা পর্যালোচনা করে আমরা সরকারকে দেব।’
তিনি বলেন, কোন ডিগ্রিধারীরা কী পদবি লিখবেন, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। তবে তাদের কাছ থেকে তিনটি পরামর্শ পেয়েছি: যারা ডিগ্রিধারী, তারা ইঞ্জিনিয়ার লিখবেন, অন্যরা নামের আগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার লিখবেন। আরেকটি হচ্ছে নামের আগে কেউ কিছু লিখবেন না, নামের পরে লিখবেন ডিগ্রিধারী না ডিপ্লোমা। তৃতীয় প্রস্তাবটি হচ্ছে কিছুই লিখবেন না। সে ক্ষেত্রে অন্য পেশার লোকজন তো তাদের পদবি লিখেন। যেমন কৃষিবিদ।
তবে তারা অঙ্গীকার করেছেন কমিটির সুপারিশ আসার আগ পর্যন্ত আর কোনো আন্দোলন করবেন না বলেও জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তবে তাদের কর্মসংস্থানের অভাব আছে। সেটা বাড়াতে সরকারি দপ্তরে শূন্য পদ পূরণে আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের সত্যি ভাবতে হবে, কত দিন বিদেশিরা আমাদের এখানে সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সড়ক বানিয়ে দেবে। আমরা ঠিক করব, বিদেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থাকলে তারা নির্দিষ্ট অনুপাতে বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের নেবেন। আমরা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়েছি।