অনলাইন জুয়া ও বেটিং কার্যক্রম দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর যৌথ অভিযানে ইতিমধ্যে অনলাইন জুয়ায় জড়িত প্রায় পাঁচ হাজার এমএফএস অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। আগামী দিনে নজরদারি আরও জোরদার করতে একটি যৌথ ডাটাবেজ তৈরিরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
গত সপ্তাহে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি সভাকক্ষে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, বিকাশ ও অন্যান্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “দেশকে অনলাইন জুয়া থেকে মুক্ত করতে জুয়া চক্রকে শনাক্ত করা, ট্রাফিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে লিংক স্লো করা এবং সংশ্লিষ্ট নম্বর বা এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্লক করা জরুরি। তবে সব প্রক্রিয়া হবে ন্যায়সঙ্গত ও আইনি কাঠামোর মধ্যে।”
যা যা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে
অ্যাকাউন্ট বন্ধ ও নম্বর ব্লক: অনলাইন জুয়ায় জড়িত প্রায় পাঁচ হাজার এমএফএস অ্যাকাউন্ট ইতিমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। শুধু গত দুই সপ্তাহেই ৩৯৭টি মোবাইল নম্বর বন্ধ করা হয়েছে।
যৌথ ডাটাবেজ তৈরি: সরকারি সংস্থা, অপারেটর ও পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলোর তথ্য সমন্বয় করে একটি যৌথ ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে নজরদারি জোরদার করা যায়।
ইন্টারনেট গতি সীমিতকরণ: অনলাইন বেটিংয়ে জড়িত ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর শনাক্ত করে তাদের ইন্টারনেটের গতি সীমিত করার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
সিম সংখ্যা সীমিতকরণ: বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী জানান, আগামী ১৬ ডিসেম্বরের পর সিম সংখ্যা ১০টিতে সীমিত করার সিদ্ধান্ত অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখবে।
বিশেষ সংস্থা গঠনের প্রস্তাব: মাদক অধিদপ্তরের মতো একটি বিশেষ সংস্থা গঠন করে অনলাইন জুয়া ও স্ক্যাম দমন এবং ক্রস-ডোমেইন মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার প্রস্তাব করা হয়েছে সভায়।
আইনি প্রেক্ষাপট
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর আওতায় অনলাইনে জুয়া খেলা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই আইনের ২০ ধারায় বলা হয়েছে, জুয়ার জন্য কোনো পোর্টাল বা অ্যাপ তৈরি, পরিচালনা, তাতে অংশগ্রহণ বা এতে উৎসাহ প্রদান করলে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড, অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
এই উদ্যোগের ফলে অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রণে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।
পূর্বের পোস্ট :