আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২৯৮টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন কেন্দ্রভিত্তিক প্রশিক্ষণ, পোলিং এজেন্ট নিয়োগ ও ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে কমিটি গঠনের কাজ চলছে। গাজীপুর-৬ ও নরসিংদী-৫ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক–দেড় মাসের মধ্যে এসব প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শেষ করা হবে। দলের লক্ষ্য, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনায় ন্যায় ও সমতাভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন।’

যদিও নির্বাচন পদ্ধতি ও জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এরই মধ্যে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ ছয়টি দল অভিন্ন দাবিতে যৌথ কর্মসূচি শুরু করেছে।

তরুণ নেতৃত্বের উত্থান

দলটি এবার ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী তরুণ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে, বিতর্কে না জড়িয়ে ‘নীরব প্রচার’, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক প্রচারণা এবং স্থানীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে জনসম্পৃক্ততাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

দলের তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার। তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৪ (কসবা–আখাউড়া) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ‘গ্রামে গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক করছি। মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি।’

মাঠের প্রস্তুতি

স্থানীয়ভাবে চিকিৎসাসেবা, দরিদ্রদের সহায়তা, মসজিদে মুসল্লিদের সঙ্গে যোগাযোগ ও স্থানীয় উন্নয়নকাজে যুক্ত হয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছেন প্রার্থীরা।

জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের ২০ সদস্যের মধ্যে ১৫ জন এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা–১৫ এবং সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা–৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান রাজশাহী–১, এ টি এম আজহারুল ইসলাম রংপুর–২ এবং সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কুমিল্লা–১১ আসনে লড়বেন।

আলোচিত প্রার্থী ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব

ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম মাসুদ (পটুয়াখালী–২), শিশির মনির (সুনামগঞ্জ–২) ও দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী (ঠাকুরগাঁও–১) প্রার্থী হচ্ছেন। আলোচিত ইসলামি বক্তা আমির হামযাকেও কুষ্টিয়া–৩ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধ মামলায় দণ্ডিত জামায়াত নেতাদের সন্তানরাও প্রার্থী হচ্ছেন। মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নাজিবুর রহমান মোমিন (পাবনা–১), দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই ছেলে মাসুদ সাঈদী (পিরোজপুর–১) ও শামীম সাঈদী (পিরোজপুর–২), এবং মীর কাসেম আলীর ছেলে আইনজীবী মীর আহমদ বিন আরমান (ঢাকা–১৪) নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন।

অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনা–৫ ও ময়মনসিংহ–৬ আসনে মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানিয়েছে, ‘বিক্ষোভের মুখে প্রার্থী পরিবর্তন করলে তা সংগঠনে নেতিবাচক নজির সৃষ্টি করবে।’

নির্বাচনী জোট ও সম্ভাবনা

১৯৯৬ সালের পর এককভাবে নির্বাচন করেনি জামায়াত। এবার তারা ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে। তবে এককভাবে লড়ার প্রস্তুতিই তাদের মূল কৌশল।

দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আগের চেয়ে এখন কয়েক গুণ বেশি মানুষের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। মানুষ নতুন নেতৃত্ব চায়। জামায়াতকে তারা একবার পরীক্ষা করতে চায়, আমরাও সেই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত।’

জামায়াতের অভ্যন্তরীণ জরিপে দেখা গেছে, রংপুর, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকার কয়েকটি আসনে তারা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে বলে আশাবাদী।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াত এবার দীর্ঘমেয়াদি সাংগঠনিক প্রস্তুতি ও তরুণ নেতৃত্বের অংশগ্রহণে নতুন বার্তা দিতে চাইছে। এখন দেখার বিষয়, এই প্রস্তুতি কতটা ভোটে প্রতিফলিত হয়।