নতুন প্রজন্মকে সৎ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাথমিকে নৃত্য শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তিনি ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের কোনো বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নেই। ফলে সমৃদ্ধ সিলেবাস থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে দেশে সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা তৈরি হচ্ছে এবং তারা ধর্মীয় তাহযিব-তমুদ্দুন এবং সাংস্কৃতিক ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সৎ নাগরিক ও সৎ নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। তদুপরি ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ তৈরি করে, যা সৎ আচরণের ভিত্তি গড়ে তোলে এবং এটি একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য। ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা না থাকলে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ঘটবে এবং সৎ নাগরিক ও নেতৃত্ব তৈরি হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে সঙ্গীত ও নৃত্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সঙ্গীত বা নৃত্য (গান বাজনা) শিক্ষার্থীর আবশ্যিক কোনো বিষয় হতে পারে না। বরং কোনো পরিবারের যদি একান্তই গান বা নৃত্যের প্রতি আগ্রহ থাকে তাহলে তারা ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষক রেখেও বিষয়টি শেখাতে পারে। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়টি সব ধর্মের জন্যই অতি জরুরি। তাই সরকার ও শিক্ষা উপদেষ্টাকে তিনি আহ্বান জানান, অবিলম্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব ধর্ম শিক্ষা গ্রহণ করে জীবনকে আলোকিত করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যে মুহূর্তে জাতির নতুন প্রজন্মের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, ঠিক সেই সময়ে সরকার প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সঙ্গীত ও নৃত্যের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা জাতির জন্য আত্মঘাতী। এই মুহূর্তে প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে আদর্শ ও আলোকিত মানুষরূপে গড়ে তোলা। অথচ তা না করে কোমলমতি প্রজন্মকে সংগীত ও নৃত্য শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার মূলত শিক্ষার্থীদের নৈতিকভাবে অবক্ষয় ও অনৈতিক সমাজ গঠনে উৎসাহিত করছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানানো হলেও সে বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বরং এর পরিবর্তে নৃত্য, গান, বাজনা শিখানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা তাঁর মতে অত্যন্ত দুঃখজনক ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, ধর্মীয় শিক্ষা শুধু মুসলমানদের জন্য নয়; দেশের সকল ধর্মাবলম্বী শিশুর জন্য সমানভাবে প্রয়োজনীয় ও আবশ্যক বিষয়। অথচ সরকারের এই নিয়োগ পরিকল্পনায় ধর্মীয় শিক্ষাকে পাশ কাটিয়ে সঙ্গীত ও নৃত্য শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে নৈতিক অবক্ষয় ও চরিত্রহীন মানুষ তৈরি হবে বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করছেন।