চট্টগ্রামে গত ১৩ মাসে রাজনৈতিক বিরোধে খুন হয়েছেন ১৫ জন। এর মধ্যে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০ জন। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের পাশাপাশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরোধেও বেড়েছে খুনোখুনির ঘটনা।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। বিশেষ করে বুধবার (৫ নভেম্বর) নির্বাচনী জনসংযোগে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুষ্কৃতকারীরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগে গুলির ঘটনার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে একই এলাকায় ইদ্রিস আলী নামের এক রিকশাচালককে হাঁটুতে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। এর কয়েক ঘণ্টা পর রাতে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।

চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সহিংসতার বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে রাউজানে। গত ১৩ মাসে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে যে ১০ জন নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৭ জনই এই উপজেলায়। নিহতদের মধ্যে আছেন আলমগীর আলম, আবদুল হাকিম, কমর উদ্দিন, মো. ইব্রাহিম, মানিক আবদুল্লাহ, মুহাম্মদ সেলিম ও দিদারুল আলম।

রাউজানে বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা—কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার—এর অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। বুধবার রাতের গোলাগুলির ঘটনায়ও তাঁরা একে অপরকে দায়ী করেছেন।

চট্টগ্রামের মিরসরাই, বাকলিয়া, খুলশীসহ বিভিন্ন এলাকায়ও একই ধরনের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।

অন্যদিকে, গত ১৩ মাসে আওয়ামী লীগের পাঁচজন কর্মী খুন হয়েছেন, সবাই রাউজান উপজেলার বাসিন্দা।

বিএনপি নেতাদের দাবি, দলীয় প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পেছনে সরাসরি রাজনৈতিক বিরোধ না থাকলেও দুটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব এর কারণ হতে পারে। তবে তাঁরা আশঙ্কা করছেন, জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্রও এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) জানায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সরোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে। তিনি স্থানীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পান। পুলিশ বলছে, সরোয়ারকে টার্গেট করেই এই হামলা চালানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, সরোয়ার ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর একসময়কার সহযোগী। পরে তাঁদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়, যা খুনের কারণ হতে পারে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ইতিমধ্যে অস্ত্রধারী কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তদন্তও চলছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রামে আটটি থানা ও আটটি ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া ৯৪৫টি অস্ত্রের মধ্যে ৭৮০টি উদ্ধার হয়েছে। বাকি অস্ত্রগুলো এখনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত ১৩ মাসে চট্টগ্রাম শহর ও জেলায় খুন হয়েছেন ৩৫ জন, এর মধ্যে ২২ জন গুলিতে নিহত।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম শাখার সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ার কারণেই অপরাধীরা প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যা করতে দ্বিধা করছে না। দ্রুত অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।