অ্যাননটেক্স গ্রুপের নামে জনতা ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাত ও সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন সোমবার সাংবাদিকদের জানান, কমিশন অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।’

এর আগে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। তদন্ত শেষে দেখা যায়, আত্মসাত করা টাকার পরিমাণ ‘আরও বেশি’।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভুয়া কাগজপত্রের ভিত্তিতে অ্যাননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে শর্ত শিথিল করে ঋণ দেওয়া হয়। ওই ঋণের নামে ৫৩১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়, যা সুদ-আসলে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩০ কোটি ১৮ লাখ টাকায়।

দুদক জানিয়েছে, আসামিরা প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকে রাখা বন্ধকের জমিতে বাস্তবে কোনো ভবন, স্থাপনা বা কারখানা নির্মাণ করেননি। এমনকি ঋণগ্রহীতা মালিক হওয়ার আগেই ৩ কোটি ৫ লাখ টাকার একটি জমিকে অতিমূল্যায়ন করে ৬০৯ কোটি ৮৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা দেখানো হয়।

অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইউনুছ বাদল, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, সাবেক নির্বাহী পরিচালক নওশাদ আলী চৌধুরী, জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদসহ আরও অনেকে অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে নাম পেয়েছেন।

২০২২ সালে অ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণ অনিয়মের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান করেছিল দুদক। তবে তখন পর্যাপ্ত প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগের পরিসমাপ্তি ঘটে। গত বছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর সরকার পরিবর্তনের পর বিষয়টি পুনরায় তদন্ত শুরু করে দুদক।

তদন্তের ভিত্তিতে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় ১০ জুলাই আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ পান ড. আতিউর রহমান। পরে তাকে আরও এক মেয়াদের জন্য দায়িত্বে রাখা হয়। ২০১৬ সালের ২ অগাস্ট তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সমালোচনার মুখে সে বছরের মার্চে তিনি পদত্যাগ করেন।

অন্যদিকে, অধ্যাপক আবুল বারকাত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দুই মেয়াদে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান তিনি এবং ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে তার মেয়াদ শেষ হয়।