ক্যারিবীয় অঞ্চলের দিকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধের অজুহাত সাজানোর’ অভিযোগ তুলেছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপে অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ভূমধ্যসাগর থেকে ইউএসএস গেরাল্ড আর ফোর্ডকে ক্যারিবীয় অঞ্চলের দিকে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একসঙ্গে ৯০টি পর্যন্ত বিমান বহন করতে সক্ষম এ বিমানবাহী রণতরীকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাদুরো বলেন, ‘তারা নতুন এক অন্তহীন যুদ্ধের অজুহাত সাজাচ্ছে। তারা অঙ্গীকার করেছিল, আর কখনো যুদ্ধে জড়াবে না। এখন আবার যুদ্ধের অজুহাত তৈরি করছে।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে যুদ্ধজাহাজ, পারমাণবিক সাবমেরিন ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানসহ বিভিন্ন হামলাসামগ্রী মোতায়েন করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন বলছে, তাদের এই অভিযানের লক্ষ্য ‘মাদক পাচারকারীদের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালানো। এর অংশ হিসেবে তারা ওই অঞ্চলে সন্দেহভাজন পাচারকারীদের নৌকায় একের পর এক বিমান হামলা চালাচ্ছে।
শুক্রবারের সর্বশেষ হামলায় ছয়জন পুরুষ ‘মাদক সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ। তার দাবি, হামলার লক্ষ্য ছিল ভেনেজুয়েলার সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’।
তবে এসব হামলা ক্যারিবীয় অঞ্চলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এই অভিযানগুলোর বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এটি মাদকবিরোধী যুদ্ধ। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এর আড়ালে হোয়াইট হাউস ভেনেজুয়েলার সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এমন অভিযোগ তুলেছেন মার্কিন কংগ্রেসের কয়েকজন সদস্যও।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই মাদুরোর কড়া সমালোচক। সম্প্রতি তিনি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টকে ‘মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীর সর্দার’ বলেও উল্লেখ করেছেন। তবে মাদুরো সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
থিঙ্ক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের লাতিন আমেরিকা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো ড. ক্রিস্টোফার সাবাতিনি বিবিসিকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক উপস্থিতি মূলত মাদুরোর ঘনিষ্ঠ মহলে ভয় সৃষ্টি করার কৌশল, যাতে তারা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উৎসাহিত হয়।’
পেন্টাগনের ঘোষণায় বলা হয়েছে, ইউএসএস গেরাল্ড আর ফোর্ডকে পাঠানো হচ্ছে মার্কিন সাউদার্ন কমান্ড এলাকায়, যার আওতায় মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার পাশাপাশি ক্যারিবীয় অঞ্চলও রয়েছে।
মুখপাত্র শন পারনেল বলেন, ‘মাদক পাচার বিঘ্নিত করা ও বহুজাতিক অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর শক্তিক্ষয় এবং সেগুলো নির্মূলের সক্ষমতা জোরদার করবে অতিরিক্ত এই যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রণতরী যুক্তরাষ্ট্রকে ভেনেজুয়েলার ভূখণ্ডে সরাসরি হামলার সুযোগ করে দিতে পারে। ট্রাম্পও সাম্প্রতিক সময়ে এমন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার ভেতরে ‘কোকেইন সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ও মাদক পাচারের রুটে’ হামলার চিন্তা করছেন, যদিও এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।
পূর্বের পোস্ট :