ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা—এই অক্টোবরে বয়স পেরিয়েছে ৮০ বছর। জানালেন, তিনি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন লড়তে সক্ষম। তাঁর শরীরে আছে ‘৩০ বছর বয়সী যুবকের উদ্যম’।
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় দেওয়া এক ভাষণে লুলা জানান, তিনি চতুর্থ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন লড়তে সংকল্পবদ্ধ এবং সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, লুলা রীতিমতো ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন। আধুনিক লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রবাদপুরুষে রূপ নিচ্ছেন বামপন্থী ধারার এই নেতা।
আমার বয়স আশি, কিন্তু তাই বলে থেমে যাওয়ার মানুষ আমি নই। শরীরে আমার ৩০ বছর বয়সের যুবকের উদ্যম। আগামী নির্বাচন লড়তে আমি প্রস্তুত,”—এ বছর নিজের জন্মদিনে ঘোষণা দেন লুলা।
আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লুলা জয়ী হলে মেয়াদ শেষে তাঁর বয়স দাঁড়াবে ৮৫ বছর। ৪০ বছর ইউনিয়ন লিডার থাকা এই বামপন্থী নেতা যদি বিজয়ী হন, তবে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ পদমর্যাদায় তাঁর মেয়াদ হবে ১৬ বছর—যা শুধু ব্রাজিল নয়, লাতিন আমেরিকার ইতিহাসেও অনন্য।
লুলার সমালোচকেরা বলছেন, এই বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন লড়তে গিয়ে তাঁর যেন অবস্থা না হয় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতো। বাইডেন ৮১ বছর বয়সে আবারও নির্বাচনে দাঁড়াতে গিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বাকযুদ্ধেই বড় রকমের হোচট খান এবং শেষ পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ান।
তবে লুলার বেলায় এমন আশঙ্কা কম বলে মনে করেন তাঁর আত্মজীবনী লেখক ও বন্ধু ফার্নান্দো মোরাইস। তিনি জানান, এই বয়সেও নিয়মিত জিমে যান লুলা। তাঁর দেহের ফিটনেস সূঁইয়ের মতো সূক্ষ্ম এবং ছুরির মতো ধারালো।
মোরাইস বলেন, “লুলার সবচেয়ে বড় শক্তি তাঁর সাহস ও একাগ্রতা। ১৫ বছর আগে কণ্ঠনালীর ক্যান্সার সারিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। এই দেড় দশকে একবারও সিগারেট স্পর্শ করেননি।”
তিনি আরও জানান, এত বয়সেও লুলার স্মৃতিশক্তি প্রখর। বাইডেন বড় ধরনের স্মৃতিহানি সমস্যায় ভুগছিলেন, কিন্তু লুলার এমন কোনো সমস্যা নেই। শুধু আত্মিক সাহস নয়, শারীরিক শক্তিতেও লুলা দাপুটে।
পুরোনো এক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে মোরাইস বলেন, “একবার ভারত থেকে মোজাম্বিক হয়ে ২৩ ঘণ্টার টানা সফরে লুলার সঙ্গী ছিলাম। ব্রাজিলে পৌঁছে মনে হয়েছিল আমি জীবন্ত লাশ। লুলাকে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিতেই তিনি জানালেন, সাও পাওলোর এক সমাবেশে যোগ দিয়ে পরে বিশ্রাম নেবেন তিনি। এমন অদম্য উদ্যম বিরল।”
লুলার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, তিনি প্রতিদিন মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ঘুমান। এত স্বল্প নিদ্রার পরও দিব্যি সতেজ থাকেন লুলা।
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট, ডানপন্থী নেতা জায়ার বলসোনারোর চক্ষুশূল লুলা। লুলাকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দিতে হেন কিছু নেই করেননি বলসোনারো। অথচ লুলার শাসনামলেই ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন এই সাবেক প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের প্রিয়ভাজন বলসোনারোকে বাঁচাতে ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক পর্যন্ত আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাতেও নিজের অবস্থান থেকে একচুল নড়েননি লুলা।
তবে আগামী নির্বাচন লুলার জন্য সহজ হবে না বলে মনে করছেন দেশটির জনগণ। গত নির্বাচনে লুলা বলসোনারোকে হারিয়েছিলেন মাত্র ২০ লাখ ভোটে—যা ব্যবধানের দিক থেকে খুব একটা বড় নয়।
এবারের নির্বাচনে বলসোনারো জেলে থাকায় তাঁর মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য ট্রাকিসিও ফ্রেইতাসকে সম্ভাব্য ডানপন্থী নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনি দেশের পুঁজিপতি ও অভিজাত শ্রেণির নিরঙ্কুশ সমর্থন পেয়েছেন।
দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে জয় পাওয়া লুলার জন্য সহজ হবে না। বড় ধরনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে যেতে হবে তাঁকে।
পূর্বের পোস্ট :