দিনভর কাজের ক্লান্তি শেষে দুপুরে বা বিকেলে একটু গড়িয়ে নেওয়া যাকে বাঙালিরা আয়েশ করে বলে ভাতঘুম—এ যেন অনেকে রুটিনের অংশ করে ফেলেছেন। কেউ বলেন, এই ‘পাওয়ার ন্যাপ’ কর্মক্ষমতা বাড়ায়; আবার কারও ধারণা, বিকেলের ঘুম রাতের ঘুম নষ্ট করে দেয়।
তাহলে বিকেলের ঘুম আসলে আশীর্বাদ না অভিশাপ? গবেষণা আর বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন, জেনে নেওয়া যাক।
স্বল্প সময়ের ঘুমের জাদু
বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, ২০ থেকে ৩০ মিনিটের ঘুমই ‘পাওয়ার ন্যাপ’। এই স্বল্প ঘুম মন ও শরীর দুটোই সতেজ করে।
কর্মক্ষমতা ও সতর্কতা বাড়ে
নাসার এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ২৬ মিনিটের ঘুম কর্মক্ষমতা ৩৪ শতাংশ এবং সতর্কতা ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে।
স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগে সহায়ক
কগনিটিভ নিউরোসায়েন্টিস্টদের মতে, ২০–৩০ মিনিটের ঘুম মস্তিষ্কে নতুন তথ্য সংরক্ষণে সাহায্য করে, শেখার ক্ষমতা ও মনোযোগও বাড়ায়।
চাপ কমে, মেজাজ থাকে ভালো
স্বল্প সময়ের ঘুম মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমায়। ফলে মেজাজ থাকে স্থির, হতাশা কমে যায়।
হৃদ্যন্ত্রের সুরক্ষা
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের ছোট্ট একটি ঘুম হৃদ্রোগের ঝুঁকি হ্রাসেও সহায়ক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, আরভিনের কগনিটিভ নিউরোসায়েন্টিস্ট ডা. সারা মেডনিক বলেন, “২০–৩০ মিনিটের ঘুম শরীর ও মনকে সম্পূর্ণ শিথিল করে। দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে এই ঘুম নেওয়া সবচেয়ে কার্যকর।”
দীর্ঘ ঘুমে বাড়ে বিপদ
ঘুম উপকারী হলেও দিনের ঘুম যদি দীর্ঘ হয় তাহলে আছে এর কিছু ক্ষতিকর দিকও।
রাতের ঘুমে ব্যাঘাত
এক ঘণ্টার বেশি ঘুমালে রাতের ঘুমের ছন্দ নষ্ট হয়। এতে অনিদ্রা বা ঘুমাতে দেরি হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘুমের জড়তা
গভীর ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে উঠলে কিছুক্ষণ মাথা ঝিমঝিম করা, বিভ্রান্তি বা অলসতা দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে
জার্নাল অব আমেরিকান জেরিয়াট্রিকস সোসাইটি’-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দিনে ৯০ মিনিটের বেশি ঘুম স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞের মত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খান বলেন, “বিকেলের ঘুম ভালো না খারাপ, তা নির্ভর করে ব্যক্তির শরীর ও অভ্যাসের ওপর। নিয়মিত, স্বল্প সময়ের ঘুম উপকারী হতে পারে, কিন্তু এলোমেলো বা দীর্ঘ ঘুম রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় এবং স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিও তৈরি করে।”
করণীয়
দুপুরের খাবারের পর ২০ মিনিটের ‘পাওয়ার ন্যাপ’ নিতে পারেন। বিকেলের শেষভাগে ঘুম না নেওয়াই ভালো। আর রাতে ঘুমের সমস্যা থাকলে দিনের ঘুম এড়িয়ে চলুন।
স্বল্প সময়ের বিকেলের ঘুম মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়। তবে ঘুম যদি দীর্ঘ হয় বা অনিয়মিত সময়ে হয়, তা শরীরের উপকারের বদলে ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
তাই ঘুম হোক সচেতন, সংক্ষিপ্ত এবং নিয়মমাফিক—ঠিক যেমন একটি পাওয়ার ন্যাপ হওয়া উচিত।
পূর্বের পোস্ট :