বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গবাদিপশুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষিতে অতিসত্বর প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই) রংপুর বিভাগে প্রায় ৩০ লক্ষ অ্যানথ্রাক্স টিকা সরবরাহ করবে। এর মধ্যে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাতেই ২০ লক্ষ টিকা প্রেরণ করা হবে। 

আজ রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। 

মন্ত্রনালয়টি বলছে গবাদিপশুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় রোগটির বিস্তাররোধ ও নিয়ন্ত্রণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই জরুরি ও সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। 

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় “ওয়ান হেলথ” কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করছেন-অসুস্থ পশু জবাই না করা, মৃত পশুকে খোলা স্থানে বা পানিতে না ফেলা, বরং গভীরভাবে মাটিচাপা দেওয়া এবং যেকোনো পশুজনিত অসুস্থতার ক্ষেত্রে দ্রুত নিকটস্থ ভেটেরিনারি হাসপাতাল বা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাকে অ্যানথ্রাক্সে বেশি আক্রান্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করাফ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এরই ধারাবাহিকতায় অতিসত্বর প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই) রংপুর বিভাগে প্রায় ৩০ লক্ষ অ্যানথ্রাক্স টিকা সরবরাহ করবে, যার মধ্যে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাতেই ২০ লক্ষ টিকা প্রেরণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে এ বিজ্ঞপ্তিতে। 

রংপুর জেলার নয়টি উপজেলায় পীরগাছা (৫৩,৪০০), কাউনিয়া (৩৪,০০০), রংপুর সদর (২৬,৫০০), মিঠাপুকুর (৩৪,৫০০), গংগাচড়া (৪,৮০০), তারাগঞ্জ (৪,৩০০), বদরগঞ্জ (৫,০০০) ও পীরগঞ্জ (৫,০০০) এখন পর্যন্ত ১,৬৭,০০০ গরুতে টিকা প্রয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া উঠান বৈঠক, পথসভা এবং প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ৩৬টি কসাইখানায় গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া গবাদিপশুতে অ্যানথ্রাক্স টিকা প্রদানের জন্য ৩২টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে (মিঠাপুকুর ১৭টি, পীরগাছায় ৮টি ও কাউনিয়ায় ৭টি)।

গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬,৪০০ গরুতে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। আক্রান্ত এলাকায় দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গরু পুঁতে ফেলা, টিকাদান, মাইকিং, উঠান বৈঠক এবং লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৫,০০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং ৫টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে রক্তের ১১টি নমুনা পরীক্ষায় সবগুলো নেগেটিভ পাওয়া গেলেও সংগৃহীত ১১টি মাংসের নমুনার মধ্যে ১০টি পজেটিভ পাওয়া গেছে। এছাড়া, মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। টিমটি আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করবে। 

চিকিৎসকদের মতে, অ্যানথ্রাক্স হলো ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায় না। অ্যানথ্রাক্স সব সময় প্রাণঘাতী নয়, তবে জীবাণুটি শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে বা চিকিৎসা না করালে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। চর্মজনিত অ্যানথ্রাক্সের মৃত্যুহার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। 

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার দুটি ইউনিয়নে কয়েকজন রোগী উপজেলা বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন, এদিকে চলতি সেপ্টেম্বরের শুরুতে দুইজন সন্দেহভাজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে অ্যানথ্রাসিস রোগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে কিনা এখনো নিশ্চিত করা যায় নি।