হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব ব্যাহত করতে একটি গোষ্ঠী খাগড়াছড়ির গুইমারায় সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
এর আগে গতকালও তিনি বলেছিলেন, ‘একটি মহল চাচ্ছে, এই উৎসবটা যাতে ভালোভাবে ও ধর্মীয় উদ্দীপনার সঙ্গে হতে না পারে।’ তবে বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত বলেও জানান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খাগড়াছড়ির গুইমারায় সহিংসতা নিয়ে একটি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
খাগড়াছড়িতে বর্তমান অবস্থা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পাহাড়ের অবস্থা শান্ত। সেখানে এখন মোটামুটি কোনো সমস্যা নেই। এটা করা হয়েছিল যাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ভালোভাবে পূজা উদযাপন করতে না পারেন। পূজা ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের সঙ্গে করতে হয়। তারা যাতে ভালোভাবে এটা উদযাপন করতে না পারেন, সেটা ছিল কিছু কিছু লোকের উদ্দেশ্য। সেটিই তারা করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি।’
সোমবার পুরাতন রমনা থানা কমপ্লেক্সে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচটি থানার প্রশাসনিক কাম-ব্যারাক ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গুইমারায় সহিংসতায় দেশের বাইরে থেকে আনা অস্ত্র দিয়ে একদল সন্ত্রাসী পাহাড়ের ওপর থেকে গুলি করেছে। খাগড়াছড়ি সহিংসতায় ভারতের ইন্ধন আছে কি না—সেক্ষেত্রে আপনাদের পদক্ষেপ কী, প্রশ্নের জবাবে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি একটি সত্যিকার প্রশ্ন। এটা যাতে কেউ ঘটাতে না পারে, এ জন্য আমরা সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা বর্তমানে সেখানে আছেন। তিনি বিষয়টি দেখছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে মোটামুটি সন্তোষজনক অবস্থায় আছে বলে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু সন্ত্রাসী পাহাড়ের ওপর থেকে গুলি করেছে। এই অস্ত্রগুলো অনেক সময় দেশের বাইরে থেকে আসে। আমি অবশ্য দেশের নাম বলতে চাই না। সাংবাদিক তো দেশটির নামটাই বলে দিয়েছেন। এটি প্রতিহত করতে হলে সবার সহযোগিতা দরকার, সবাই তা করবেন।’
খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ঘোলাটে হচ্ছে কি না—প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে সনাতন ধর্মীদের একটি বড় উৎসব চলছে। সেটিকে শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু একটি মহল চাচ্ছে, এই উৎসবটা যাতে ভালোভাবে ও ধর্মীয় উদ্দীপনার সঙ্গে হতে না পারে। একটা মহলই কিন্তু খাগড়াছড়িতে এই ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে।’
এদিকে খাগড়াছড়ির গুইমারায় সহিংসতার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় কমিটি গঠনের এই তথ্য জানান জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। জেলা প্রশাসক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন; ক্ষতিগ্রস্তরাও বিভিন্ন অভিযোগ প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেন। এ সময় তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আজ আমরা এখানে এসেছি, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে। আমরা তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তাদের পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। যারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব আমরা নেব।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘অবরোধকারীদের সঙ্গে আমাদের একটি বৈঠক হয়েছে। তাদের যে ৮ দফা রয়েছে, তার মধ্যে আমরা সাতটায় উত্তর দিয়েছি। আমরা চাই আলোচনা টেবিলে বিষয়টির সমাধান হয়। তারা যে অবরোধ দিয়েছে, সেটা প্রত্যাহার করলে আমরাও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করব।’
এ সময় পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘গুইমারায় সহিংসতায় যারা হতাহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে মামলা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তারা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।’
পূর্বের পোস্ট :