খাগড়াছড়ির গুইমারায় সহিংসতায় দেশের বাইরে থেকে আনা অস্ত্র দিয়ে একদল সন্ত্রাসী পাহাড়ের ওপর থেকে গুলি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) পুরাতন রমনা থানা কমপ্লেক্সে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচটি থানার প্রশাসনিক কাম-ব্যারাক ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
খাগড়াছড়ি সহিংসতায় ভারতের ইন্ধন আছে কি না—সেক্ষেত্রে আপনাদের পদক্ষেপ কী, প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি একটি সত্যিকার প্রশ্ন। এটা যাতে তারা ঘটাতে না পারে, এ জন্য আমরা সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা বর্তমানে সেখানে আছেন। তিনি বিষয়টি দেখছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে মোটামুটি সন্তোষজনক অবস্থায় আছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু সন্ত্রাসী পাহাড়ের ওপর থেকে গুলি করেছে। এই অস্ত্রগুলো অনেক সময় দেশের বাইরে থেকে আসে। আমি অবশ্য দেশের নাম বলতে চাই না। সাংবাদিক তো দেশটির নামটাই বলে দিয়েছেন। এটি প্রতিহত করতে হলে সবার সহযোগিতা দরকার, সবাই সেটা করবেন।’
গতকাল দেশে একটি বড় ধর্মীয় উৎসব শুরু হয়েছে। এ সময়ে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করেন, রাস্তা-ঘাট যাতে বন্ধ না করেন, এই পূজাটা যাতে নির্বিঘ্নে হতে পারে, সে বিষয়ে সবাই সহযোগিতা করবেন,’ যোগ করেন তিনি।
খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ঘোলাটে হচ্ছে কি না—প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে সনাতন ধর্মীদের একটি বড় উৎসব চলছে। সেটিকে শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু একটি মহল চাচ্ছে, এই উৎসবটা যাতে ভালোভাবে ও ধর্মীয় উদ্দীপনার সঙ্গে হতে না পারে। একটা মহলই কিন্তু খাগড়াছড়িতে এই ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে।’
ঢাকা শহরে পঞ্চাশটি থানার মধ্যে ২৫টির নিজস্ব ভবন আছে জানিয়ে উপদেষ্টা আরও বলেন, বাকিগুলো বিভিন্ন ভাড়া বাসায় আছে। এখন আমরা নিজস্ব ভবন তৈরি করার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে পাঁচটি থানা আজ উদ্বোধন করা হয়েছে। এগুলো আগামী পনেরো মাসের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। আমি তাদের বলেছি, যদি আঠারো মাসের মধ্যে শেষ করে দিতে পারেন, তাহলে ধন্যবাদ জানাব। খুবই শিগগিরই শাহবাগ থানার ভবনেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারব।
এদিকে খাগড়াছড়িতে শনিবার জারি হওয়া ১৪৪ ধারা অব্যাহত রয়েছে, তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সড়কে শিথিল করা হয়েছে জুম্ম-ছাত্র জনতার ডাকা অবরোধ। সোমবার সকালে এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এই ঘোষণা দিয়েছে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতার’ মিডিয়া সেল।
তাদের পোস্টে বলা হয়, রোববার ‘গুইমারায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের গুলিতে এবং সেটলারদের নির্যাতনে আহত জুম্ম ভাইবোনদের উন্নত সুচিকিৎসা এবং শহীদ জুম্ম ভাইদের লাশের সৎকারের সুবিধার্থে ঢাকা-খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দুপুর ১২টা থেকে সড়ক অবরোধ শিথিল থাকবে।’
একই সঙ্গে আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে একটি চিকিৎসক দল আসবে, তাদের আগমনে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সর্বস্তরের সহযোগিতা কামনা করা হয় পোস্টে। তবে দুই সড়ক বাদে জেলার বাকি সড়কগুলোতে অবরোধ চলবে বলেও পোস্টে জানানো হয়েছে।
মারমা এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে শনিবার ভোর থেকে এই অবরোধ শুরু করে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’। অবরোধে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভের মধ্যে পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় শনিবার দুপুর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
সেই অবরোধ ও ১৪৪ ধারা সোমবারও অব্যাহত আছে। এর মধ্যে শহরের চেঙ্গী স্কয়ার, শাপলা চত্বর, কলেজ গেট, স্বনির্ভর, জিরো মাইলে পোস্ট বসিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। সেখানে ১৪৪ ধারার মধ্যে চলাচলকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা।