খাগড়াছড়িতে শনিবার থেকে জারি হওয়া ১৪৪ ধারা এখনও বহাল রয়েছে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সড়কে শিথিল করা হয়েছে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতার’ ডাকা অবরোধ।

সোমবার সকালে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতার’ মিডিয়া সেলের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, রোববার গুইমারায় সেনা ও পুলিশ সদস্যদের গুলিতে এবং সেটলারদের নির্যাতনে আহতদের সুচিকিৎসা ও নিহতদের লাশ দাফনের সুবিধার্থে ঢাকা-খাগড়াছড়ি এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে দুপুর ১২টা থেকে অবরোধ শিথিল থাকবে। তবে জেলার অন্য সব সড়কে অবরোধ চলবে।

পোস্টে আরও বলা হয়, আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ঢাকা থেকে একটি চিকিৎসক দল আসবে। তাদের আগমনে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।

মারমা এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে শনিবার ভোর থেকে অবরোধ শুরু করে ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’। অবরোধ চলাকালে সড়কে টায়ার জ্বালানো ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ হয়। পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় শনিবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে।

সেই অবরোধ ও ১৪৪ ধারা সোমবারও বহাল আছে। এ সময় শহরের চেঙ্গী স্কয়ার, শাপলা চত্বর, কলেজ গেট, স্বনির্ভর ও জিরো মাইলে নিরাপত্তা বাহিনী চৌকি বসিয়েছে। ১৪৪ ধারার মধ্যে চলাচলকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা।

অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ির সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙামাটিসহ সারাদেশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও পর্যটকরা। দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙাসহ ৯ উপজেলার সঙ্গেও জরুরি সেবা ছাড়া অন্য যানবাহন বন্ধ রয়েছে।

শুক্রবার খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা বহু পর্যটক আটকা পড়েছেন। কেউ সাজেকে যেতে পারেননি, আবার খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা বা নিজ জেলায় ফিরতেও পারেননি। সোমবার সকালে শাপলা চত্বরে আটকা পড়া পর্যটক নারায়ণগঞ্জের কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা ২৩ জন শনিবার সকালে খাগড়াছড়িতে পৌঁছাই। এরপর থেকে শহরের মধ্যে বন্দি হয়ে আছি। ঘুরতেও পারছি না, আবার ফিরতেও পারছি না। আমাদের মতো আরও অনেকে আটকা পড়েছেন।’

এদিকে রোববার গুইমারায় ১৪৪ ধারার মধ্যেই দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিনজন পাহাড়ি নিহত হন। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর এক মেজরসহ ১৩ জন সদস্য এবং গুইমারা থানার ওসিসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছে, দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

অন্যদিকে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি। রোববার রাতে খাগড়াছড়ি জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক তমাল দাশ লিটন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গোৎসব সামনে। এই উৎসবকে আনন্দঘন ও ধর্মীয় পরিবেশে পালনের জন্য চলমান অবরোধ স্থগিত করার আহ্বান জানাই।’

একইসঙ্গে তারা খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের কঠিন শাস্তির দাবি জানান এবং আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার দ্রুত সমাধানের আহ্বান করেন।