দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।

রোববার মধ্যরাতে তারা জানিয়েছেন, কর্মবিরতির পাশাপাশি লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিও চলবে।

আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর রোববার রাত পৌনে ১০টায় কর্মবিরতি স্থগিত করে অবস্থান কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এবং তথ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিবরণীতেও শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিতের কথা বলা হয়েছিল।

কিন্তু শিক্ষকরা শহীদ মিনারে ফেরার পর আরেক আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন–লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি কর্মবিরতি ও অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

সিদ্ধান্ত বদলের কারণ জানতে চাইলে শিক্ষকদের অন্যতম নেতা মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষকদের জনরোষে নেতারা সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন, কর্মবিরতি চলবে।’

এর কিছুক্ষণ পর খায়রুন নাহার লিপি অবস্থানরত শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘ঢাকা মহানগরের শিক্ষকরা দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ক্লাস চালিয়ে বিকেল তিনটায় শহীদ মিনারে সমবেত হবেন।’

পরে ফের মধ্যরাতে শিক্ষক নেত্রী খায়রুন নাহার লিপি, শাহিনুর আল আমিন, আবুল কাশেম, আনিসুর রহমান, মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ ও মাহবুবুর রহমান চঞ্চল—এই পাঁচ শিক্ষকের দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে কর্মবিরতি ও লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে।

সেখানে বলা হয়, সোমবার বিকেল ৫টায় অর্থ সচিব ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে শিক্ষক নেতারা ‘চূড়ান্ত’ বৈঠকে বসবেন।

রোববার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানার সভাপতিত্বে এক বৈঠকে সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা চেয়ে দাবি জানান।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা আবদুল্লাহ শিবলী সাদিক বৈঠক শেষে রাত পৌনে ১০টায় পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘সভায় শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় শিক্ষক নেতাদের দাবির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে যত দ্রুত সম্ভব দাবিগুলো সমাধানের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ার প্রেক্ষিতে শিক্ষক নেতারা চলমান কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন।’

পরে তথ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিবরণীতেও একই ঘোষণা আসে।

তিন দফা দাবিতে শনিবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। সেদিন বিকেলে ‘কলম বিরতি’ কর্মসূচি পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে শাহবাগ থানার সামনে তাদের আটকে দেয় পুলিশ।

এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান, লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাসে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।

শিক্ষক নেতাদের দাবি, এতে দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন এবং পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের দাবি, আন্দোলনকারীদের মধ্যে একটি দল ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পেরিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে’ পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পুলিশের বাধার মুখে শহীদ মিনারে ফিরে এসে রোববার থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। শনিবার মধ্যরাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে তারা ‘পুলিশের হামলার’ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে শিক্ষকরা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালাচ্ছেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম–শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন–লিপি), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ এ মোর্চায় রয়েছে।

এদিকে একাদশ গ্রেডে বেতন, পদোন্নতি ও উচ্চতর গ্রেড জটিলতা নিরসনের দাবিতে সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়া শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর নেতারাও ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।